কিডনি হাসপাতালে পুরোপুরি সচল হলো ডায়ালাইসিস সেবা

জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি প্রতিষ্ঠানের ডায়ালাইসিস কেন্দ্রে রোগীদের ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটে পুরোপুরি সচল হয়েছে ডায়ালাইসিস সেবা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস আবার শুরু হয়েছে। চলবে রাত পর্যন্ত। ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ হওয়া নিয়ে রোগীর স্বজনদের উদ্বিগ্ন না হতে অনুরোধ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এর আগে গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ ওঠে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বকেয়া পরিশোধ না করায় ডায়ালাইসিসের দায়িত্বে থাকা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ সেবা বন্ধ করে দেয়। এতে বিপাকে পড়েন রোগী ও স্বজনেরা।

আজ দুপুরে কিডনি হাসপাতালের দোতলায় গিয়ে দেখা যায়, ডায়ালাইসিস সেন্টারে রোগীদের কৃত্রিম উপায়ে রক্ত পরিশোধন (ডায়ালাইসিস) চলছে। সেন্টারের বাইরে স্বজনেরা অপেক্ষা করছেন। কথা হয় গাজীপুর থেকে আসা ফজলুল করীম নামের একজনের সঙ্গে। তাঁর বাবা ৫৩ বছর বয়সী আবুল হোসেনের ডায়ালাইসিস চলছে দুপুর ১২টা থেকে। চলবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। সপ্তাহে দুদিন তাঁর বাবার ডায়ালাইসিস করতে হয়।

ফজলুল করীম বলেন, ডায়ালাইসিস বন্ধ হওয়া অনেক চিন্তার বিষয়। এক দিন ডায়ালাইসিস না হলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একদম জীবন নিয়ে টানাটানি।

স্যানডোর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস বাংলাদেশ লিমিটেড নামের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস করার জন্য এ হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলেন, জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের কাছে তাদের ২৩ কোটি টাকা পাওনা। পাওনা বকেয়া থাকায় ডায়ালাইসিস পরীক্ষার জন্য সেন্টারের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতনও দেওয়া যাচ্ছে না।

গত ৩১ জানুয়ারি স্যানডোর ডায়ালাইসিস সেন্টার এক নোটিশে জানায়, দুই বছরের বেশি সময় ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বকেয়া নিয়ে জটিলতা চলছে। তাদের কার্যকরী তহবিল শূন্য। ফলে ডায়ালাইসিসের জন্য কাঁচামাল কিনতে তারা অসমর্থ। সরবরাহকারীও প্রয়োজনীয় রসদ দেওয়া বন্ধ রেখেছে।

স্যানডোরের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট কে ইউ এম শামসুন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, বকেয়া টাকা চেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বেশ কয়েকবার জানানো হয়েছে। তবে সাড়া মেলেনি। শেষমেশ যন্ত্রপাতি ও রসদে টান পড়ায় ডায়ালাইসিসের কার্যক্রম থমকে যায়।

এ হাসপাতালে প্রতিদিন ১৮০–২০০ রোগীর ডায়ালাইসিস হয়। এ ডায়ালাইসিস সেন্টারে শয্যা আছে ৬০টি। একেকজনের রক্ত পরিশোধন করতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ ছিল। দুপুরের পর তা চালু হয়। ওই দিন দিবাগত রাত তিনটা পর্যন্ত রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ডায়ালাইসিস সেন্টারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে, ডায়ালাইসিস চলছে। তবে হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী স্যানডোর এভাবে কার্যক্রম বন্ধ করতে পারে না। তিনি বলেন, হাসপাতালের কাছে যে বকেয়া টাকা তাঁরা পাবেন, তা অধিদপ্তরের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে শিগগির তা পরিশোধ করা হবে।

পরিচালক জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আজ দুপুরে এ–সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছে। সভায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতাল ও বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেন্টার চালুর উদ্যোগের কথা আলোচনায় এসেছে।