কুমিল্লার ঘটনায় হিন্দু-মুসলিম নয়, জড়িত দুর্বৃত্তরা: নুরুল
কুমিল্লার ঘটনাটি সাজানো ও পরিকল্পিত বলে মন্তব্য করেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক। তিনি বলেছেন, এ ঘটনার সঙ্গে কোনো হিন্দু-মুসলিম জড়িত নয়, জড়িত দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তরা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
আজ সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়ে নুরুল এসব কথা বলেন। ‘বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে’ ছাত্র অধিকার পরিষদ এই সমাবেশের আয়োজন করে।
বিক্ষোভ সমাবেশে নুরুল হক হলেন, সারা দেশ যখন দাঙ্গা–হাঙ্গামায় জ্বলছে, তখন বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো একে অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে গতানুগতিক বক্তব্য দিচ্ছে। এসব অঘটন যারা ঘটিয়েছে, তারা সাম্প্রদায়িক অপশক্তি নয়, রাজনৈতিক অপশক্তি। কুমিল্লায় চার ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সহযোগিতা চাইলেও তারা এগিয়ে আসেনি।
সরকারের উদ্দেশে নুরুল বলেন, ‘প্রতিপক্ষের ওপর দায় চাপানোর গতানুগতিক বক্তব্য বাদ দিয়ে দ্রুত বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাইবোনেরা তাঁদের নিরাপত্তার জন্য যে বিক্ষোভ কর্মসূচি করছেন, তাঁদের প্রতি আমরা সংহতি জানাই। সহিংসতার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করছি। যেসব মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে, সরকারি খরচে সেই মন্দিরগুলো পুনর্নির্মাণ করতে হবে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে তাঁদের ক্ষতির দ্বিগুণ পরিমাণ সহযোগিতা করতে হবে। লোক দেখানো তদন্ত কমিটি কিংবা ঘটনাস্থল পরিদর্শনেই যেন এ ঘটনা সীমাবদ্ধ না থাকে।’
‘থলের বিড়াল’ বেরিয়ে আসার ভয়ে সরকার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাগুলোর তদন্ত ও বিচার করতে চায় না বলে অভিযোগ করেন নুরুল হক। তিনি বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারে রয়েছে। রামু, নাসিরনগর, অভয়নগরসহ বিভিন্ন জায়গায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা তাদের শাসনামলেই ঘটেছে। একটি ঘটনারও নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত হয়নি। এর মধ্য দিয়ে আমরা ধারণা করতে পারি, সরকার রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য এসব ঘটনা ঘটায়। নাসিরনগরের ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে জড়িত তিনজনকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছিল। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, সরকার এই অপশক্তিকে প্রশ্রয় দেয়। একটি খুনেরও বিচার হচ্ছে না, একটি ঘটনারও তদন্ত হচ্ছে না।’
সব ধর্মের মানুষের উদ্দেশে নুরুল বলেন, বাংলাদেশ যে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ, তা সব মত-পথের মানুষ এখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা থেকে শুরু সব অধিকার ভোগ করবে—এ সবের ফয়সালা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে হয়ে গেছে। কাজেই আজকে যাঁরা অধিকারবঞ্চিত, তাঁদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সংখ্যাগুরু মানুষকে পাশে দাঁড়াতে হবে।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, হিন্দু-মুসলিমের সম্পর্কের অবনতি ঘটানোর জন্য কুমিল্লায় ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। প্রকৃত হিন্দু-মুসলিম এই ষড়যন্ত্র করতে পারে না। যারা এটি ঘটিয়েছে, তারা সম্পূর্ণ অমানুষ ও কুলাঙ্গার। বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিমে কোনো বিভেদ নেই। রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য তাদের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা ও কুমিল্লার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসাইন, নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক নুসরাত তাবাসসুম প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে ‘অন্ধকার রাজনীতিকে দিশা দেখাতে’ টিএসসি থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত প্রতীকী আলোর মিছিল করে ছাত্র অধিকার পরিষদ।