চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতে ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন

প্রতীকী ছবি

ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন সাহেদী খিলগাঁও, রামপুরা, সবুজবাগের মাদারটেক ও নন্দীপাড়া এলাকায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। তাঁরা এলাকার মাদক কারবারেও জড়িত।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গত বুধবার গভীর রাতে রাজধানীর সবুজবাগে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, গুলি, ইয়াবাসহ দেলোয়ার হোসেন সাহেদী ওরফে সাঈদী হোসেনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

তাঁকে র‌্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ ও তাঁর সহযোগীরা র‌্যাবের ওপর হামলা চালিয়ে দেলোয়ার হোসেনকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান। এ সময় র‌্যাব জোবায়েরকেও গ্রেপ্তার করে। র‍্যাব ছাত্রলীগের নেতা দেলোয়ার হোসেন ও জোবায়েরের বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় অস্ত্র, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মোট তিনটি মামলা করে। শুক্রবার আদালত দেলোয়ারের দুদিন রিমান্ড মঞ্জুর করলেও জেবায়েরের জামিন মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রবীন্দ্রনাথ প্রথম আলোকে বলেন, আদালত অস্ত্র আইনে দেলোয়ারের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় রিমান্ড না মঞ্জুর করলেও এই দুই মামলায় তাঁকে জামিন দেননি আদালত। আর সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে জোবায়েরের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় রিমান্ড মঞ্জুর না করে তাঁর জামিন দেন আদালত। রিমান্ডে দেলোয়ারের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার নামে যে বা যারা চাঁদাবাজি করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে। যে আমার নামে চাঁদাবাজি করতে গিয়েছিল, তাকে ধরা হয়েছে, তার কাছে একটি অস্ত্র পাওয়া গেছে।

আমার নামে চাঁদা দাবির বিষয়টি শোনার পরই ব্যবস্থা নেয় র‌্যাব। যারা এ ধরনের চাঁদাবাজি করবে, সে যে–ই হোক, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’

সবুজবাগ থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ছাত্রলীগের সহসভাপতি দেলোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন নন্দীপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী শেখ আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নন্দীপাড়ায় তাঁর টিভি ও ফ্রিজের শোরুম ছিল। চার বছর আগে সন্ত্রাসী দেলোয়ার তাঁর সহযোগীদের নিয়ে তাঁর দুই ছেলেকে গুরুতর আহত করে শোরুমে ব্যাপক ভাঙচুর, মালামাল ও ক্যাশ থেকে টাকা লুট করেছিলেন। ওই ঘটনায় তিনি খিলগাঁও থানায় দেলোয়ার ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি। এরপর দেলোয়ার বাহিনীর ভয়ে তিনি ব্যবসা ছেড়ে দেন এবং তাঁর এক ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়ে দেন।

শেখ আলম আরও বলেন, দেলোয়ারের ভয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ মামলা করতে সাহস পান না। ন্যায়বিচারের আশায় তিনিই প্রথম মামলা করেছিলেন। কিন্তু এরপর তিনি মহাবিপদে পড়ে যান।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, দেলোয়ার দরিদ্র ঘরের সন্তান। এলাকায় চাঁদাবাজি করে তিনি এখন অনেক টাকার মালিক। এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিনি তাঁর সহযোগীদের নিয়ে মোটরসাইকেলে মহড়া দিতেন। মাঝেমধ্যেই প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা রাখতে তাঁদের ওপর হামলা চালাতেন।

তাঁরা মাদক কারবারও করতেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাঁরা দেলোয়ার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পেতেন না।

এদিকে আজ সবুজবাগ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম রাসেল ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মাদক ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত অভিযোগে থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাঈদী হোসেনকে (দেলোয়ার হোসেন সাহেদী) পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো।