চিকিৎসকদেরও গুনতে হয়েছে জরিমানা, আটকা পড়েছেন অনেকে

কর্মস্থলে আসার পথে ৩০০০ টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছে এক চিকিৎসককে
ছবি: সংগৃহীত

লকডাউনের প্রথম দিনে কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে ভোগান্তিতে পড়েছেন চিকিৎসকেরা। কাউকে কাউকে জরিমানা গুনতে হয়েছে।  অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে দেওয়া, কিংবা দুই ঘণ্টা পর্যন্ত পথে আটকে থাকার মতো ঘটনাও ঘটেছে। ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিজ (এফডিআরএস) এসব খবর দিয়েছে।

এফডিআরএস এর যুগ্ম মহাসচিব রাহাত আনোয়ার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে বেশ কিছু চিকিৎসক অভিযোগ করেছেন। প্রধানত দুই ধরনের সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। কেউ কেউ হাসপাতালে যাওয়া বা আসার পথে চেকপোস্টে হয়রানির শিকার হয়েছেন। আবার কেউ কেউ হাসপাতালে যাওয়ার জন্য রাস্তায় নেমে কোনো যানবাহন পাননি। লকডাউনে চিকিৎসকেরা কী করে হাসপাতালে পৌঁছাবেন, তার একটা ব্যবস্থা করা অতি জরুরি।

চিকিৎসকদের নিজস্ব বেশ কিছু গ্রুপে ভোগান্তির শিকার ব্যক্তিরা পোস্ট দিয়েছেন। বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের পেজে লিখেছেন কৃষ্ণা হালদার। তিনি লিখেছেন, ‍‘গত রাতে কুয়েত মৈত্রী সরকারি  হাসপাতালে আমার নাইট শিফটে ডিউটি ছিল। সকালে আমার ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার পিক আপ করার সময় কারওয়ান বাজার সিগন্যালে ড্রাইভার আমার আইডি কার্ড দেখানোর পরও পুলিশ মামলা করেছে।’

এই চিকিৎসক আরও অভিযোগ করেছেন, পুলিশ তাঁকে ফাইন করেছে, সব কাগজপত্র নিয়ে গেছে। পরে তিনি পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাননি। বারবার চেষ্টা করেও তিনি মুভমেন্ট পাস বের করতে পারেননি বলেও উল্লেখ করেছেন।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে কাজ করা নার্সরা বিপাকে পড়েন একদম সকালে। হাসপাতালটির আইসিইউর দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক শাহজাদ হোসেন মাসুম লিখেছেন, ‘‍আমার আইসিইউর নার্সদের বহনকারী অধিদপ্তর থেকে সংযুক্ত স্টিকারযুক্ত গাড়ি টঙ্গী থেকে আসার সময় আটকে রাখে পুলিশ এবং জানায় মুভমেন্ট পাস ছাড়া যেতে দেবে না। ... তারা আমাকে কল করলে আমি পরিচালক মহোদয়কে জানাই। তারা কোভিড আইসিইউর স্টাফ উল্লেখ করে অনেকবার অনুরোধ করলেও পুলিশ মুভমেন্ট পাস ছাড়া গাড়ি ছাড়বে না বলে জানায়। দুই ঘণ্টা আটকে থাকার পর তারা হাসপাতালে পৌঁছাতে পারে।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবেদনবিদ্যা বিভাগের চিকিৎসক ইফতেখারকে ফার্মগেটে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তিনি রাতের পালার কাজ সেরে বাসায় ফিরছিলেন। পরে ওই চিকিৎসক সাত কিলোমিটার হেঁটে রামপুরার বাসায় পৌঁছান।

স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক নাজমুল ইসলামের স্ত্রী চিকিৎসক ইসরাত জাহান ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। সঙ্গে তাঁর স্বামীকে যে তিন হাজার টাকার জরিমানা গুনতে হয়েছে সেই স্লিপও যুক্ত করেছেন।

ইসরাত জাহান লিখেছেন, ‘‌‌আমার হাসবেন্ড স্কয়ার হসপিটালের কোভিড ইউনিটে কর্তব্যরত আছেন। আজকে সকাল ৮টা থেকে তার ডিউটি ছিল। আমাদের বাসায় আমার শ্বশুর কোভিড পজিটিভ হওয়ায় আমার হাসবেন্ড বাসা (মুন্সিগঞ্জ) থেকে নিজেদের গাড়ি নিয়ে ডিউটিতে যাচ্ছেন বেশ কিছুদিন যাবৎ। ...সকালে আমাদের গাড়ি সাইনবোর্ডের একটু পরে থামায় এবং ৩০০০ টাকা জরিমানা করে। আমার হাসবেন্ডের সাথে তার কর্মস্থলের আইডি কার্ড ছিল। স্কয়ার হসপিটালের ট্রান্সপোর্ট অবশ্যই মুন্সিগঞ্জ আসবে না। আর হঠাৎ করে একটা অ্যাপ বানিয়ে বলল নেন মুভমেন্ট পাস নামক সার্কাস নিয়া বাইর বের হবেন যেখানে তাদের ওয়েবসাইটেই ঢোকাই যায় না। এমতাবস্থায় ডাক্তাররা কি সারা দিন ডিউটি বাদ দিয়ে পাস পাস খেলবে নাকি????’
রিয়াজ আহমেদ তমাল লিখেছেন, ‘৭টায় গাজীপুরের টঙ্গী কলেজ গেট থেকে রিকশাযোগে আসার সময় টঙ্গী স্টেশন রোডে পুলিশ আটকাল। আমার আইসিডিডিআর,বি আইডি কার্ড দেখালে বলে যে আমাদেরও নাকি বের হওয়া নিষেধ। অবশেষে বলে দিলেন যে হাসপাতালে ডিউটি করতে হলে রাতে সেখানে থেকে যেতে।’
এসব বিষয়ে জানতে ঢাকা মহানগর পুলিশে ট্রাফিকের অতিরিক্ত কমিশনার মুবিনুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‌‘আমি যখন আপনার সঙ্গে কথা বলছি তখনই আরেকজন চিকিৎসককে আটকে দেওয়ার কথা শুনলাম। তাঁর নাম হেমন্ত গোমেজ। কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছে, আমাদের কানে পৌঁছানো মাত্রই সুরাহা করার চেষ্টা করছি।’

জরুরি সেবায় নিয়োজিত যাঁরা তাঁদের চলাচল লকডাউনের আওতামুক্ত বলে জানান তিনি। চিকিৎসকদের গাড়িচালকরাও আওতামুক্ত কি না, জানতে চাইলে বলেন, ‘গাড়িচালকদের মুভমেন্ট পাস নিতে হবে।’

মুভমেন্ট পাসের মেয়াদ তিন ঘণ্টা এবং গতকাল অনেকেই চেষ্টা করেও ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারেননি। এ অবস্থায় করণীয় কী? জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, প্রথম দিনে একসঙ্গে অনেকে মুভমেন্ট পাস নেওয়ার চেষ্টা করায় এই ঝামেলা হয়েছে। তাঁর পরামর্শ হলো, দুপুরের দিকে বা একটু বেশি রাতের দিকে মুভমেন্ট পাস পাওয়ার চেষ্টা করা।

এদিকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, তিনি সেনানিবাসে থাকেন। সকালে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য কোনো পরিবহন পাননি। দু-তিন কিলোমিটার পথ হলে হেঁটে যেতেন। সবার ব্যক্তিগত গাড়ি নেই। চিকিৎসকদের আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি।