ছাত্র ইউনিয়ন: ঐক্যের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার পর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গত শনিবার ৩৪তম সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এ সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়নের মূল কমিটি ও বিদ্রোহী দুই অংশের নেতারাই অংশ নিয়েছেন। কমিটি গঠনের পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সব বিভেদ মিটিয়ে ঐক্যের পতাকাতলে সমবেত হলো ছাত্র ইউনিয়ন। অবশ্য সম্মেলন নিয়ে দুই অংশই পরে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছে।
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ২৭ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটিতে শিমুল কুম্ভকারকে সভাপতি ও আদনান আজিজ চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মাঠে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের ৩৪তম সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। ১৩ ঘণ্টার কাউন্সিল অধিবেশনের পর শনিবার ঘোষণা করা হয় নতুন কমিটি। কাউন্সিলে ৫৯ জন ভোট দেন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সব বিভেদ মিটিয়ে ঐক্যের পতাকাতলে সমবেত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন। ৩৪তম সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তে ২৭ সদস্যবিশিষ্ট ৩৪তম কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিদায়ী কমিটির সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ। কাউন্সিল পরিচালনা করেন বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম। কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের দুই অংশের দুই কেন্দ্রীয় সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী ও ফয়েজ উল্লাহ।
বিতর্ক, অসন্তোষ
২০২০ সালের ২২ নভেম্বর ৪০তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে ফয়েজ উল্লাহকে সভাপতি ও দীপক শীলকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। সম্মেলনের প্রক্রিয়া নিয়ে মতবিরোধ ও নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের জেরে তখন থেকেই সংগঠনের একটি অংশ পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে থাকে। এ অংশ তখন ‘বিদ্রোহী অংশ’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
‘সংগঠনে বিশৃঙ্খলা ও উপদলীয় তৎপরতার’ অভিযোগ তুলে গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ, সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈমসহ ‘বিদ্রোহী অংশের’ সাত নেতাকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানান ফয়েজ-দীপক। পাশাপাশি ঢাকা মহানগর ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটিও গঠন করা হয় সেদিন। এ বহিষ্কারের ঘটনার মধ্য দিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের অন্তঃকোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে। দুই অংশ পৃথকভাবেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছিল। এক অংশ কোনো জোটে গেলে অন্য অংশ যায়নি—এমন ঘটনাও ঘটেছে।
এর মধ্যেই জাতীয় পরিষদের সভা ডেকে গত বছরের ১৯ জুন ফয়েজ-দীপকদের অব্যাহতি দিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের পুনর্গঠিত কমিটি ঘোষণা করেন ‘বিদ্রোহীরা’। এতে নজির আমিন চৌধুরীকে সভাপতি ও রাগীব নাঈমকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন দৃশ্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে ছাত্র ইউনিয়নের দুই পক্ষের নেতাদের একত্রে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন সংগঠনের ‘বিদ্রোহী অংশের’ সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী। মূল কমিটির সভাপতি ফয়েজ উল্লাহকে এতে আমন্ত্রণ জানানো হলেও উদ্বোধক করা হয়নি। এ নিয়ে ফয়েজ-দীপকপন্থীদের মধ্যে অসন্তোষ আছে। এ ছাড়া সম্মেলনের ভোটে স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।
জানতে চাইলে ছাত্র ইউনিয়নের মূল কমিটির সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের (কেন্দ্রীয় কমিটি) উপস্থিতিতে তাঁদের অনুমতি নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলন ও কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। তবে সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে গঠনতান্ত্রিক ব্যত্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। এটি নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে ফয়েজ-দীপকরা কী মনে করলেন, তাতে তাঁদের কিছুই যায়-আসে না বলে মন্তব্য করেন ছাত্র ইউনিয়নের ‘বিদ্রোহী অংশের’ সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফয়েজ উল্লাহকে কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও সম্মানিত সদস্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সম্মেলনে কোনো ধরনের গঠনতান্ত্রিক ব্যত্যয়ের ঘটনা ঘটেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন বা কমিটি নিয়ে ফয়েজ-দীপকরা কী মনে করলেন বা ভাবলেন, তাতে আমাদের কিছুই যায়-আসে না।’