জঙ্গি নেতা এমদাদুল রিমান্ডে

এমদাদুল হক

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা থেকে গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির নেতা এমদাদুল হক ওরফে উজ্জ্বল মাস্টারকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আজ শুক্রবার এ আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপপরিদর্শক শরিফুল ইসলাম।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জঙ্গি নেতা এমদাদুলকে (৫৫) মোহাম্মদপুর থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, জঙ্গি নেতা এমদাদুলের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মোট তিনটি মামলা হয়েছে। একটি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে, আরেকটি বিস্ফোরক নিয়ন্ত্রণ আইন এবং অপরটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, জেএমবির পুরোনো ধারার সদস্যদের একটা অংশ নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের একসময়কার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এমদাদুল হক ওরফে উজ্জ্বল মাস্টারের নেতৃত্বে এই অংশ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে সংগঠিত হচ্ছিল। এই জঙ্গিরা সংগঠনের তহবিল সংগ্রহের জন্য ডাকাতির পরিকল্পনাও করছিল। এমনই এক ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গত শুক্রবার ভোরে ময়মনসিংহের খাগডহর এলাকা থেকে চার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বছিলা এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এমদাদুলকে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, এমদাদুল হক জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য। তাঁর সঙ্গে জেএমবির প্রতিষ্ঠাকালীন শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের সখ্য ছিল। সেই সময় এমদাদুল ময়মনসিংহ এলাকার জেএমবির আঞ্চলিক নেতা ছিলেন। তবে সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহিনের নেতৃত্বে জেএমবির বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর বনিবনা কম হচ্ছিল। এ কারণে পুরোনো ধারায় জেএমবি সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ৫০ জঙ্গিকে এক করার উদ্দেশ্যে কার্যক্রম শুরু করেন। এর মধ্যে ১১ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁর মধ্যে পাঁচজন এরই মধ্যে র‍্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমদাদুল হক নতুন করে সংগঠিত হওয়ার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। তিনি ২০০৩ সালে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা এলাকায় ব্র্যাকের একটি অফিসে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ডাকাতি, নাশকতা, হত্যার অভিযোগে ঢাকা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।

এমদাদ ২০০৭ সালে তাঁর নিকটাত্মীয় রফিক মাস্টারকে হত্যায় জড়িত ছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে এমদাদ র‍্যাবকে জানিয়েছেন, রফিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তাঁদের বেশ কয়েকজন সদস্যকে ধরিয়ে দেন। এ কারণে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে রফিক মাস্টারকে হত্যা করা হয়।

এমদাদ র‍্যাবকে জানান, তিনি ১৯৯৩ সালে ময়মনসিংহের একটি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন। দুই বছর পর স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।

পরে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার কারণে শিক্ষকতার চাকরি হারান। এমদাদ ২০০২ সালে মুক্তাগাছায় সফররত এক জঙ্গি নেতার বয়ান শুনে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। এরপর শায়খ আবদুর রহমানের কাছে বায়াত নেন এবং জামালপুরে একটি জঙ্গি আস্তানায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি একপর্যায়ে জেএমবির ময়মনসিংহের আঞ্চলিক নেতা হন। জেএমবির শীর্ষ নেতাদের ময়মনসিংহ সফরের সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতেন। নেতাদের গোপন আস্তানায় অবস্থান, বৈঠক ও বয়ান আয়োজনে ভূমিকা রাখতেন।