জিলাপির রসাল প্যাঁচ

.
.

রমজানে ইফতারে মিষ্টিজাতীয় খাবারের মধ্যে জিলাপি অন্যতম। সব শ্রেণির মানুষ ইফতারে জিলাপি পছন্দ করেন। তবে তা তৈরি কঠিন হওয়ায় বরাবরই রেস্টুরেন্টের ওপর ভরসা করতে হয়। তাই তারকা হোটেল থেকে পাড়া-মহল্লার হোটেলের সামনে বিক্রি হয় হরেক রকমের জিলাপি।

ভেতরে মিষ্টি রসে টইটম্বুর, বাইরে মচমচে—এমন জিলাপির প্যাঁচ, আকার ও স্বাদের ওপর ভিত্তি করে এর নামেও ভিন্নতা এসেছে। এর মধ্যে দাম ও পছন্দ মিলিয়ে রেশমি জিলাপির চাহিদা বেশি। এ ছাড়া রয়েছে শাহি জিলাপি, বোম্বাইয়া জিলাপি, জাফরানি জিলাপি, চিকন জিলাপি ও আমৃতি। এসব জিলাপির দোকান বা রেস্টুরেন্ট অনুযায়ী দামে কিছুটা তারতম্য রয়েছে। তা তৈরিতে উপকরণের কিছুটা ভিন্নতা দেখা গেছে।

.
.

গতকাল শনিবার সরেজমিনে রাজধানীর বেইলি রোডের ফখরুদ্দীন, নবাবি ভোজ, পিঠাঘর, বস সুইটস ও স্কাইলার্ক, ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের কড়াই গোশত, বাবুর্চি রেস্তোরাঁ, হান্ডি, রানা কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও স্টার হোটেল, চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী আলাউদ্দিন সুইটমিট, আমানিয়া রেস্টুরেন্ট, ডিসেন্ট পেস্ট্রি শপ, বোম্বে কনফেকশনারি, আনন্দ, নেওয়াজ শাহি জিলাপি ও রনী স্টোর, বংশালের হোটেল আল-রাজ্জাক, জনসন রোডের হোটেল স্টার, হোটেল ঘরোয়া, মতিঝিল ঘরোয়া, আল ইসলামিয়া রেস্টুরেন্ট, আজিমপুরের ক্যাফে জান্নাতসহ রাজধানীর বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে হরেক রকমের জিলাপি তৈরি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন ফুটপাতে শামিয়ানা টানিয়ে গড়ে উঠেছে জিলাপি তৈরির দোকান। এসব দোকান ও রেস্টুরেন্টে জিলাপি কিনতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ও দেখা গেছে।

১৮৯৪ সাল থেকে ঐতিহ্যবাহী রেশমি জিলাপি বিক্রি করছে আলাউদ্দিন সুইটমিট। বর্তমানে এই জিলাপির প্রতি কেজির দাম ১৬০ টাকা। ঢাকা শহরে এটিই প্রথম রেশমি জিলাপির দোকান বলে দাবি করেছেন আলাউদ্দিনের নাতি মো. মাশুক। তিনি বলেন, ১৮৮৪ সালে তাঁর দাদা আলাউদ্দিন ভারতের বিহারের নাকলাও থেকে এসে চকবাজারে বসতি শুরু করেন। এর ১০ বছর পর নাকলাও থেকে ঘি এনে মিষ্টির দোকান চালু করেন। এরপর আলাউদ্দিনের ছেলে আরিফ উদ্দিন, আফসার উদ্দিন, আজিজ উদ্দিন ও আনোয়ার উদ্দিন তা পরিচালনা করতেন। বর্তমানে আফসার উদ্দিনের ছেলে মো. মাসুম এই দোকানের স্বত্বাধিকারী।

.
.

বছর দশেক ধরে ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে শাহি জিলাপির চাহিদা বেড়েছে। এই জিলাপি এক থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত ওজনের তৈরি হয়। তবে এক কেজির বেশি ওজনের জিলাপি নিতে হলে সংশ্লিষ্ট দোকানে আগে জানাতে হয়। চকবাজারে এমন বড় বড় জিলাপির পসরা সাজিয়ে বসেছে নেওয়াজ শাহি জিলাপি ও রনী স্টোর। এ ছাড়া ধানমন্ডির কড়াই গোশতসহ অনেক রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন আকারের জিলাপি তৈরি করা হয়, যা শুধু জিলাপি নামেই পরিচিত।

কড়াই গোশতের হিসাবরক্ষক দেবদাস মণ্ডল বলেন, প্রথম রমজান থেকে তাঁরা ছোট-বড় দুই ধরনের জিলাপি তৈরি করেন। কিন্তু এর কোনো নাম দেওয়া হয়নি। বড় জিলাপি ৩৫০ ও ছোট জিলাপি ৪০০ টাকা কেজি করে বিক্রি করা হয়।

বেইলি রোডের নবাবি ভোজ থেকে ৩৫০ টাকা দামে এক কেজি জিলাপি কিনেছেন সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা শফিক রহমান। তিনি বলেন, ইফতারের অন্যান্য উপাদান বাসাবাড়িতে তৈরি করা যায়। কিন্তু জিলাপি তৈরি করা কিছুটা কঠিন। তাই রেস্টুরেন্টই ভরসা। 

বাংলাদেশের মতো ভারতীয় উপমহাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে রমজানে জিলাপি তৈরি করা হয়। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৩০০ শতাব্দীর রান্নাবিষয়ক এক বইতে জিলাপির উল্লেখ পাওয়া যায়। ইরানে রমজান মাসে এই জিলাপি গরিব-মিসকিনদের মাঝে বিতরণ করা হতো।