টার্মিনালের বাইরে ট্রলি আনতে বাধা

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টার্মিনালের বাইরে পার্কিং পর্যন্ত ট্রলি নিতে দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। তাই টার্মিনাল থেকে কাঁধে করে মালপত্র বাইরে আনতে হচ্ছে যাত্রীদের। গতকাল তোলা ছবি।  প্রথম আলো
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টার্মিনালের বাইরে পার্কিং পর্যন্ত ট্রলি নিতে দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। তাই টার্মিনাল থেকে কাঁধে করে মালপত্র বাইরে আনতে হচ্ছে যাত্রীদের। গতকাল তোলা ছবি। প্রথম আলো
>
  • বিমানযাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন
  • বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে এয়ারপোর্ট কার রেন্টাল সার্ভিসের গাড়িতে

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টার্মিনালের বাইরে গাড়ি পার্কিং পর্যন্ত ট্রলি নিতে দিচ্ছে না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ফলে টার্মিনাল থেকে কাঁধে করে মালপত্র বাইরে আনতে হচ্ছে দেশে ফেরা যাত্রীদের। এতে দীর্ঘ যাত্রার পর বন্দরে নেমে দুর্ভোগে পড়ছেন তাঁরা।

গতকাল সোমবার প্রায় তিন ঘণ্টা বিমানবন্দরের ভেতরে অবস্থান করে ব্যাগ-বোঁচকা নিয়ে যাত্রীদের এমন দুর্ভোগের চিত্র চোখে পড়ে। এ সময় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দর বহির্গমন টার্মিনালে গাড়িতে মালপত্র তোলার জায়গার (ক্যানপি-১ এবং ক্যানপি-২) ভেতরে প্রায় দেড় ফুট উচ্চতার স্টিলের তৈরি প্রতিবন্ধক বসানো হয়েছে। যারা টার্মিনালের ভেতর থেকে মাত্রপত্রবোঝাই ট্রলি নিয়ে আসেন, তাঁদের ওই প্রতিবন্ধক পর্যন্ত এসেই থেমে যেতে হয়। এর বেশি যাতে ট্রলি না নেওয়া যায় তার জন্যই এমন ব্যবস্থা। তবে যাঁদের স্বজনেরা গাড়ি নিয়ে এসেছেন বা বিত্তশালী, তাঁদের এই ঝামেলা নেই। তাঁরা স্বজনদের নিয়ে আসা গাড়িতে কিংবা এয়ারপোর্ট কার রেন্টাল সার্ভিসের গাড়িতে করেই বিমানবন্দর ত্যাগ করছেন। কিন্তু যাঁদের আত্মীয়স্বজন কেউ আসেননি বা এলেও সঙ্গে গাড়ি নেই, তাঁদের মালামাল নিয়ে এমন ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।

বিমানযাত্রীরা বলছেন, টিকিট অনুযায়ী যাত্রীদের ২০ থেকে ৭০ কেজি পর্যন্ত মাল বহনের সুযোগ রয়েছে। হাতে আরও প্রায় ৭ কেজি বহন করা যায়। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন পর দেশে ফেরা অনেক প্রবাসীই এই সুযোগ কাজে লাগান। দেশে ফেরার সময় পরিবার-পরিজনের জন্য নিয়ে আসেন নানান উপহার। তাতে ব্যাগ ভারী হয়ে যায়। কিন্তু ট্রলি পার্কিং পর্যন্ত ব্যবহার করতে না দেওয়ায় বিমানবন্দরে নেমেই মালপত্র নিয়ে এমন বিপাকে পড়তে হয় প্রবাসীদের।

দুবাইপ্রবাসী গাজীপুরের লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘বাড়ি থেকে লোক আসতে মানা করেছিলাম। পরিকল্পনা ছিল পার্কিং থেকে সিএনজি নিয়ে রেলস্টেশন যাব। তারপর ট্রেন ধরে বাড়ি। এখন মালপত্র নিয়ে বেশ ঝামেলাতেই পড়েছি। দেশে ফিরেই মনটা তেতো হয়ে গেল।’

একই রকম প্রতিক্রিয়া কাতার থেকে আসা চট্টগ্রামের বেলাল খানের। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পরে দেশে ফিরলাম। আত্মীয়স্বজনের জন্য কিছু উপহার এনেছি। এতে লাগেজ বেশ ভারী হয়েছে। কিন্তু এখন তো গাড়ি নিতে হলে বাইরের পার্কিং থেকে নিতে হবে। তাই মালপত্র কাঁধে করেই বের হয়েছি।’

ওমানপ্রবাসী আবদুল হালিম বলেন, ‘দেশে ফেরা প্রবাসী শ্রমিকদের কষ্ট দিতেই এই ব্যবস্থা করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। কারণ, যাঁদের টাকা আছে তাঁদের এই সমস্যায় পড়তে হয় না। আগে থেকেই গাড়ি নিয়ে তাঁদের জন্য অনেকে অপেক্ষা করে থাকে।’

দেশে ফিরে মালপত্রবোঝাই ট্রলি নিয়ে বিপাকে পড়েন আরেক প্রবাসী আলফাজ মিয়া। স্টিলের প্রতিবন্ধক ডিঙিয়ে ট্রলি বাইরে আনার চেষ্টা করলে আনসার সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। পরে আলফাজ মিয়া বলেন, ‘তারা আমাদের কামলা মনে করে। নতুন নিয়ম হয়েছে, আমি জানতাম না। বিষয়টি ভালোভাবে বললেই পারত।’

অন্যদিকে এয়ারপোর্ট কার রেন্টাল সার্ভিসের গাড়ি ভাড়া অনেক বেশি বলে অভিযোগ করেন একাধিক প্রবাসী ও তাঁদের স্বজনেরা। তাঁরা বলেন, এয়ারপোর্ট কার রেন্টাল সার্ভিসের গাড়ি নিতে গেলে গন্তব্য অনুযায়ী স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া দিতে হয়। তাই বাইরের পার্কিং থেকেই গাড়ি বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করেন অনেকে।

এয়ারপোর্ট কার রেন্টাল সার্ভিসের বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়ার তালিকা অনুসারে ঢাকার ভেতরে সবচেয়ে কাছে উত্তরা বা নিকুঞ্জ এলাকায় যেতে এসি মাইক্রো, এসি ট্যাক্সি ও নন-এসি ট্যাক্সির ভাড়া যথাক্রমে ৮০০, ৬৫০ ও ৬০০ টাকা। আর ঢাকার ভেতরে দাউদকান্দি, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জে যেতে এসি মাইক্রো, এসি ট্যাক্সি ও নন-এসি ট্যাক্সির ভাড়া ৪ হাজার, ৩ হাজার ৫০০ এবং ৩ হাজার টাকা নির্ধারিত।

দেশে ফেরা প্রবাসীরা বলছেন, বিমানবন্দর থেকে উত্তরার যেকোনো স্থানে যেতে ২০০ টাকার মধ্যেই সিএনজিচালিত স্কুটার পাওয়া যায়। ট্যাক্সি ভাড়া নিলেও ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা লাগে। অথচ কার রেন্টাল কর্তৃপক্ষ এর তুলনায় বেশি ভাড়া ধার্য করে রেখেছে।

ময়মনসিংহ থেকে ভাইকে নিতে আসা এক প্রবাসীর আত্মীয় সিয়াম আহমেদ বলেন, বিমানবন্দর থেকে মহাখালী যেতে এয়ারপোর্ট কার রেন্টাল সার্ভিসে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা লাগে। অথচ মহাখালী থেকে ময়মনসিংহের বাস ভাড়াই মাত্র ২২০ টাকা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন, পরে কথা বলবেন জানিয়ে ফোন রেখে দেন। পরে আবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি এর কোনো উত্তর দেননি।

তবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, যাত্রী সাধারণের সুবিধার্থেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে একটু অসুবিধা হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আনবে। তবে কী সুবিধা বাড়ছে, তা আর বলেননি।