টিকিটের আশায় কমলাপুরে সারা রাত শতাধিক নারী

ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কিনতে মানুষের অপেক্ষা। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, ঢাকা, ৩ জুলাইছবি: তানভীর আহাম্মেদ

ট্রেনের টিকিটের আশায় গতকাল সারা রাত কমলাপুর রেলস্টেশনে কাটিয়েছেন টিকিটপ্রত্যাশী শতাধিক নারী। ভিড় বেশি থাকায় সারা রাত স্টেশনে কাটিয়েও টিকিট না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন নারীদের অনেকে।

কমলাপুর রেলস্টেশনে মোট ১০টি কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। তার মধ্যে নয়টি কাউন্টার থেকে পুরুষদের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। বাকি মাত্র একটি স্টেশন থেকে নারীদের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। নারীদের জন্য বরাদ্দ একমাত্র কাউন্টার থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের টিকিটও বিক্রি করা হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নারী ও প্রতিবন্ধীরা।

নারীদের মধ্যে কেউ গতকাল শনিবার বিকেলে, কেউ সন্ধ্যায়, কেউবা এসেছেন রাতে। গতকাল থেকে লাইনে থাকা নয়জন নারীর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁদের একজন ঢাকার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইবনাত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল থেকে আমরা টিকিটের জন্য স্টেশনে অবস্থান করছি। রাত স্টেশনেই কাটিয়েছি। আমরা কয়েকজন মিলে নিজেরাই সিরিয়াল করেছি। গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত ১৪৪ জন নারীর সিরিয়াল করেছি। ভোররাতে বা তার পর থেকে যেসব নারী এসেছেন, তাঁদের তথ্য হালনাগাদ করা হয়নি। এত কষ্ট করার পরও বুঝতে পারছি না টিকিট পাব কি না।’

গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুর স্টেশনে আসেন মৌসুমি বেগম। তিনি যাবেন দিনাজপুর। তিনি বলেন, ‘গতকাল বিকেল থেকে লাইনে আছি, এখনো আমার সামনে অনেক মানুষ। টিকিট পাব কি না, জানি না।’

জাহানারা বেগম ঢাকার আরামবাগে একাই থাকেন। ঈদ করতে লালমনিরহাটের গ্রামের বাড়ি যাবেন তিনি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার টিকিট কেটে দেওয়ার কেউ নেই। তাই গতকাল রাত আটটায় এসেছি। রাত এখানেই ছিলাম। কিন্তু এখন টিকিট পাইনি।’

নারীরা জানান, রেলস্টেশনে রাত পার করলেও নিরাপত্তার কোনো সংকট ছিল না। কিন্তু দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বৈদ্যুতিক পাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় প্রচণ্ড গরমে তাঁরা ঘামছিলেন। তাঁদের হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে দেখা যায়।

গতকাল সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, নারীদের জন্য দুটি কাউন্টারের ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা দেখবেন।

কিন্তু দেখা গেল, নারীদের জন্য কাউন্টার তো বাড়েইনি, বরং যে একটি কাউন্টার আছে, সেখানে আজ শারীরিক প্রতিবন্ধীদের লম্বা লাইন।

ট্রেনের টিকিটের আশায় গতকাল সারা রাত কমলাপুর রেলস্টেশনে কাটিয়েছেন টিকিটপ্রত্যাশী শতাধিক নারী। ভিড় বেশি থাকায় সারা রাত স্টেশনে কাটিয়েও টিকিট না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন নারীদের অনেকে
ছবি: প্রদীপ সরকার

চারজন নারীর পর একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে।
নারীদের কাউন্টারের সামনে অন্তত ২৫ জন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে দেখা যায় আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে।

চারজন নারীর পর একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে টিকিট দেওয়ায় দেড় ঘণ্টায় মাত্র চারজন শারীরিক প্রতিবন্ধী টিকিট কাটতে পেরেছেন বলে দাবি করেন তাঁদের একজন বশির আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অন্তত ঈদের সময় প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা টিকিট কাউন্টার দেওয়া উচিত।

বশির আহমেদ বলেন, ‘প্রতিবন্ধীরা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। তা ছাড়া নারীদের তুলনায় প্রতিবন্ধীরা দুর্বল। প্রতিবন্ধীদের আগেই নারীরা টিকিট নিয়ে নিচ্ছে।’

কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য কাল সোমবার আলাদা কাউন্টার করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে নারীদের জন্য কাউন্টার বাড়ানোর সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন