ঠিকাদারের রিটে বন্ধ নালা নির্মাণ, যানজটে ভোগান্তি

ওয়াসা থেকে উত্তর সিটির কাছে কাজের দায়িত্ব যাওয়ার পর আদালতে রিট করেন ঠিকাদারেরা। এর পর থেকে কাজ বন্ধ।

মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে সড়কের এক পাশে নালা তৈরির জন্য দীর্ঘদিন ধরে খুঁড়ে রাখা হয়েছে। ফলে সড়কের অপর পাশে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এতে তৈরি হচ্ছে যানজট। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ায়
ছবি: দীপু মালাকার

নালা নির্মাণের জন্য রাজধানীর মিরপুরের বেগম রোকেয়া সরণির একপাশ খুঁড়ে রাখা হয়েছে। অপরপাশ দিয়ে চলছে যানবাহন। এতে গাড়ির চাপ বেড়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। সকালে ও বিকেলে কর্মস্থলে যাতায়াতের সময়ে মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সড়কটিতে নালা নির্মাণকাজে স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আদালত। ঘটনার সূত্রপাত রাজধানীর পয়োনিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসা থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কাছে হস্তান্তরের পর থেকে।

একটি প্রকল্পের আওতায় রোকেয়া সরণিতে পয়োনিষ্কাশন নালা নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগ করেছিল ঢাকা ওয়াসা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পয়োনিষ্কাশনের দায়িত্ব পায় সিটি করপোরেশন। এতে ওয়াসার আওতায় চলমান ওই প্রকল্প বাতিল হয়ে যায়। দায়িত্ব পেয়ে ওই সড়কে নালার বাকি কাজ করতে ডিএনসিসির নিয়োগ করা নতুন ঠিকাদার কাজ শুরু করেন। পাইপ বসাতে খোঁড়া হয় রাস্তা। এমন সময় আদালতের আশ্রয় নেন ঢাকা ওয়াসার আওতায় কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারেরা।

এখন স্থিতাবস্থা উঠে গেলেও কাজটি পুরোপুরিভাবে আগামী ডিসেম্বরের আগে শেষ করা যাবে না।
শহিদুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী, অঞ্চল–৪, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন

ঢাকা উত্তর সিটির প্রকৌশলীরা বলছেন, ২০১৮ সালে ‘ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও খাল উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিল ঢাকা ওয়াসা। ওই প্রকল্পে ওয়াসা পৌনে দুই কোটি টাকা ব্যয় করে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দুই সিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় প্রকল্পের অগ্রগতি ছিল ৩৫ ভাগের মতো।

প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল, দুই সিটি করপোরেশন ওয়াসার কাছ থেকে খাল ও পয়োনালা সংশ্লিষ্ট জনবল, যান, যন্ত্র ও প্রকল্প বুঝে নেবে। জনবল ও যন্ত্রপাতি বুঝে নিলেও জটিলতা সৃষ্টি হয় প্রকল্প বুঝে নেওয়ার ক্ষেত্রে। সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা ওয়াসার আওতায় চলমান প্রকল্পের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এতে প্রকল্পের কাজ বিদ্যমান অবস্থায় শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ওয়াসার এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রথম আলোকে বলেন, রোকেয়া সরণির পূর্ব পাশে নালার কাজ হলেও পশ্চিম পাশে হয়নি। কারণ, ঠিকাদারকে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্তে সিটি করপোরেশনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের পর সব কার্যাদেশ বাতিল হয়ে যায়।

ঢাকা উত্তর সিটির প্রকৌশল বিভাগ বলছে, তারা দায়িত্ব পাওয়ার পর কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ডের ১০০ মিটার উত্তর দিক থেকে আগারগাঁওয়ের তালতলা পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৯৫০ মিটার পয়োনিষ্কাশন নালার নির্মাণকাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজটি করছে জনি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। আদালতের স্থিতাবস্থার কারণে গত জানুয়ারি থেকে কাজ বন্ধ হয়ে আছে।

মামলার বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী চলমান নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার দাবিতে ঢাকা ওয়াসার আওতায় নিয়োজিত ঠিকাদার আবদুল ওয়াহিদ গং এবং নির্মাণকাজের মোট ব্যয়ের ৯০ ভাগ প্রদান করার দাবিতে মেসার্স মাইশা ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান আদালতে রিট করেছে। আদালত এতে স্থিতাবস্থা জারি করেছেন। এ বিষয়ে আইন বিভাগ থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, সড়কটির শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তার পশ্চিম পাশ বন্ধ। কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মেট্রোরেল স্টেশনের পশ্চিম অংশে প্রায় ১০০ মিটার সড়ক খুঁড়ে রাখা হয়েছে। রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে নালা নির্মাণের ছয় ফুট আকারের বড় ডায়া পাইপ।

ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৪–এর নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) শহিদুল ইসলাম বলেন, অন্তত নালার পাইপ লাইন বসানোর কাজ করা গেলেও যান চলাচলের জন্য সড়কটি উন্মুক্ত করে দেওয়া যেত। এখন স্থিতাবস্থা উঠে গেলেও কাজটি পুরোপুরিভাবে আগামী ডিসেম্বরের আগে শেষ করা যাবে না।