ডেঙ্গু রোগীর তথ্যে গরমিল, ফিরতে হচ্ছে ওষুধ না ছিটিয়েই

ডেঙ্গু রোগী
ফাইল ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তৈরি তালিকা অনুযায়ী রাজধানীর মুগদা এলাকার বাসিন্দা মো. মুকুল (২০) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। এলাকাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন হওয়ায় মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে মুকুলের পরিবার থেকে জানানো হয়, মুকুল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নন। তাই মশকনিধনে বিশেষ কার্যক্রম চালাতে গিয়ে করপোরেশনের কর্মীরা ওই এলাকা থেকে ফিরে এসেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের তৈরি তালিকা অনুযায়ী, মুগদার বাসিন্দা গোলাম মহিউদ্দিনও (৪৩) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। মুগদা এলাকায় গিয়ে মহিউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিরাজগঞ্জে থাকেন বলে করপোরেশনের কর্মকর্তাদের জানান।

এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের সঠিক ঠিকানা না দিয়ে সিটি করপোরেশনের কাছে তালিকা দেওয়ায় ডেঙ্গু মশা নিধনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ। এ জন্য ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে রোগীর সঠিক ঠিকানা দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে এমন একটি চিঠি ১৫ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, অধিদপ্তরের দেওয়া তালিকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির বাইরের এলাকার রোগীদেরও করপোরেশনের রোগী হিসেবে দেখানো হচ্ছে। একই রোগীর নাম একাধিক দিনের তালিকায় দেওয়া হচ্ছে। আবার এমন কিছু ব্যক্তির নামও তালিকায় দেওয়া হচ্ছে, যিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নন।

দক্ষিণ সিটির মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে প্রতিদিন যে তালিকা দেওয়া হচ্ছে, এটি মশকনিধন কার্যক্রমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই তালিকায় পাওয়া ঠিকানা অনুযায়ী ডেঙ্গু রোগীর বাসস্থানের ৩০০ গজের মধ্যে বিশেষ মশকনিধন কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি ওই এলাকায় চিরুনি অভিযান চালানো হয়। কিন্তু কন্ট্রোল রুমের তালিকা পর্যালোচনা করে ভুল তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যেমন ডেঙ্গু রোগীর পূর্ণ ঠিকানা দেওয়া হচ্ছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধু এলাকার নাম উল্লেখ করা হচ্ছে। কিছু রোগীর ভুল মোবাইল নম্বর দেওয়া হচ্ছে। রোগী তালিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব অসংগতির কারণে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির পক্ষ থেকে আরও বলা হচ্ছে, ১ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে দক্ষিণ সিটি এলাকায় ১৮১ জন রোগী ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। আদতে রোগীর সংখ্যা ছিল ১২৭ জন।

ডেঙ্গুর রোগীর সঠিক তথ্য না দেওয়ার বিষয়ে জানতে হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হট লাইন নম্বরে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। ফোন রিসিভের পর ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাঁদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ভর্তি রোগীদের যে তথ্য তাঁদের দেওয়া হচ্ছে, ওই তথ্যগুলো তাঁরা সিটি করপোরেশনকে দিচ্ছেন।

সেলিম রায়হান অবশ্য এ-ও বলছেন, হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হলে অনেক সময় রোগীর স্বজনের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে দক্ষিণ সিটি থেকে যখন রোগীর নম্বরে কল করা হয়, তখন তিনি রোগীর স্বজন কি না, তা-ও জিজ্ঞাসা করতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি এমন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তাহলে উত্তর সিটি করপোরেশনের অবস্থা কী? তা জানতে কথা হয় উত্তর সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ারের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে তাঁদের যে তালিকা দেওয়া হচ্ছে, তাতে তাঁরা এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অসংগতি পাননি।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, গত সোমবার সকাল আটটা থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৭ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ভর্তি হওয়া এ রোগীর সবাই ঢাকার বাসিন্দা। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ১১০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ১০৬। আর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আজ সকাল আটটা পর্যন্ত ৮০৮ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে।