ঢাকা উত্তর সিটি: বাসাবাড়িতে মশার লার্ভা, জরিমানা ৮ লাখ

জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা আছে কি না, তা দেখছেন সিটি করপোরেশনের কর্মী
ছবি: প্রথম আলো

এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ১০টি মামলার মাধ্যমে প্রায় ৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। মশকনিধনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিশেষ অভিযান চালিয়ে এই জরিমানা আদায় করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

আজ মঙ্গলবার থেকে নিজেদের ১০টি অঞ্চলের ৫৪টি ওয়ার্ডে একযোগে এডিস মশা নির্মূলে বিশেষ মশকনিধন কর্মসূচি শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ। ১০ দিনব্যাপী এই অভিযান চলবে ২৬ মে পর্যন্ত।

ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তারা জানান, অভিযানে বিভিন্ন এলাকার নির্মাণাধীন ভবন, বাসাবাড়ির আঙিনা, ভূগর্ভস্থ গাড়ি রাখার জায়গা, খালি প্লট ও ভবনের ভেতর পরিত্যক্ত গাড়ির টায়ারে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। ওই সব ভবনের মালিক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে নিজেদের দোষ স্বীকার করেন। পরে তাৎক্ষণিক ১০টি মামলার মাধ্যমে মোট ৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীর উত্তরা এলাকায় দুটি খালি প্লটে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। তবে তখন সেখানে প্লট মালিকেরা কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তাই ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে দুটি নিয়মিত মামলা দেন।

আজ সকালে গুলশান-২–এর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন পার্কে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এ সময় পার্কের পাশের একাধিক নির্মাণাধীন ভবনে যান ভ্রাম্যমাণ আদালতের সদস্যরা। তখন উত্তর সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবন থেকে মাত্র ৪০০ মিটার দূরে অবস্থিত ৮৬/৮৮ নম্বর সড়কের ১ নম্বর প্লট এবং ৮৬ নম্বর সড়কের ৬/ডি নম্বর প্লটে নির্মাণাধীন দুটি বহুতল ভবনের ভূগর্ভস্থ গাড়ি রাখার জায়গায় জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। পরে ওই দুটি নির্মাণাধীন ভবনে ২ লাখ করে মোট ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেন ঢাকা উত্তর সিটির ৩ নম্বর অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল বাকি।

একটি নির্মাণাধীন ভবনে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের উপসহকারী প্রকৌশলী সুপ্ত দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ের জায়গায় একটি প্লাস্টিকের ড্রামে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা লার্ভা পেয়েছেন। কিন্তু ওই ড্রামে পানি জমে ছিল না। প্রতিদিনই বিভিন্ন কাজে ওই পানি ব্যবহার করা হয়। পরে লার্ভা থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে নিজেদের ভুল স্বীকার করেন তিনি।

অভিযান প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা সাংবাদিকদের বলেন, অভিযানে এ বছর নির্মাণাধীন ভবনগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এডিস মশার প্রজনন হতে পারে, এমন ‘হটস্পট’গুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। মেয়রের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে, যেকোনো ভবনে, নির্মাণাধীন বাড়িতে, সরকারি, বেসরকারি কিংবা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কার্যালয়ে মশার লার্ভা পাওয়া গেলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এমনকি সিটি করপোরেশনের কোনো কার্যালয়ে যদি লার্ভা পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রেও ছাড় দেওয়া হবে না।

নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার লার্ভা থাকায় একজনকে জরিমানা করা হচ্ছে। গুলশান-২, ১৭ মে
ছবি: প্রথম আলো

এই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৪০০-৪০০ বর্গগজে ভাগ করে প্রতিটি বর্গগজ এলাকায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকেরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন। ইতিমধ্যে ৯৫০ জন স্বেচ্ছাসেবকের তালিকা করে করপোরেশন থেকে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নগরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রত্যেক নাগরিককে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। নিজেদের বাসাবাড়িতে, আঙিনায় জমে থাকা পানি ফেলে দিয়ে এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে হবে, সবাই মিলে সচেতন হলেই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব।

গুলশান-২ এলাকায় আরেকটি নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় আরও ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-১–এর আওতাধীন ১ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫টি মামলায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং অঞ্চল-৬–এর ৫১ নম্বর ওয়ার্ড ও উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে ২টি মামলায় ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অঞ্চল-১–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নায়ন প্রথম আলোকে বলেন, অভিযানে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ৩টি নির্মাণাধীন ভবনে, একটি ভবনের ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ে ও একটি বাড়ির আঙিনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। পরে ওই ভবনের মালিক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের মামলার মাধ্যমে জরিমানা করা হয়।