ঢাবিতে ‘চলমান জাদুঘর’ ঘুরে দেখলেন ১৯ দেশের সেনা কর্মকর্তারা
১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপনাগুলো নিয়ে গঠিত ‘চলমান জাদুঘর’ ঘুরে দেখেছেন ১৯টি দেশের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।
এসব দেশের সেনাবাহিনীর অন্তত ৩০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজ শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হেঁটে হেঁটে ওই সব স্থান ও স্থাপনা ঘুরে দেখেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালানো গণহত্যার ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে ২০১৮ সাল থেকে চলমান জাদুঘর কার্যক্রম শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ। এরই অংশ হিসেবে আজ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সিনিয়র ডিরেকটিং স্টাফ রিয়ার অ্যাডমিরাল এম ময়েনুল হকের নেতৃত্বে ১৯ দেশের সেনা কর্মকর্তারা স্থান ও স্থাপনাগুলো ঘুরে দেখেন।
আজ সকাল সাড়ে নয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলা থেকে সেনা কর্মকর্তারা যাত্রা শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ এই বটতলায় প্রথম উত্তোলন করা হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। এরপর মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৫ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীর স্মরণে নির্মিত স্মৃতি চিরন্তন, ব্রিটিশ কাউন্সিল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জগন্নাথ হল, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ডাকসু সংগ্রহশালা পরিদর্শন করেন তাঁরা। পরে মধুর ক্যানটিনে গিয়ে তাঁরা কিছুক্ষণ সময় কাটান।
অতিথিদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান ও ঘটনা সম্পর্কে জানান সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অজয় দাশগুপ্ত।
পরে অজয় দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রথম টার্গেট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা সংঘটিত গণহত্যার উপকেন্দ্র বলতে পারি। স্বাধীনতাযুদ্ধে এখানে ১৯৫ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারী প্রাণ দিয়েছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ধূলিকণায় মিশে আছে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্ত। গণহত্যার এসব স্থান ও স্থাপনাগুলো আসলে জীবন্ত জাদুঘর। এগুলোকে আমরা চলমান জাদুঘর নাম দিয়েছি।’
অজয় দাশগুপ্ত আরও বলেন, ‘একাত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ঘটেছিল, কী ধরনের গণহত্যা পরিচালিত হয়েছিল—সম্প্রতি এসব বিষয়ে জানার আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। আজ ১৯টি দেশের সেনাবাহিনীর প্রায় ৩০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসেছেন। মুক্তিযুদ্ধের একজন প্রত্যক্ষদর্শী ও যোদ্ধা হিসেবে আমি তাঁদের কাছে একাত্তরের ঐতিহাসিক ঘটনাবলি তুলে ধরেছি।’
এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের গবেষণা সহযোগী জি এম আরিফুজ্জামান বলেন, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে যে নারকীয় গণহত্যা চালিয়েছিল, সেটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা আদায়ে সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যার ঐতিহাসিক স্থানগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে আমাদের সেন্টারে একটি ডিপ্লোমা কোর্স আছে। চলমান জাদুঘর কর্মসূচিও এর অন্তর্ভুক্ত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা এটি ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছি, যাতে আন্তর্জাতিকভাবে এই গণহত্যা সুপ্রতিষ্ঠা পায়।’
এর আগে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন ও তাঁর স্ত্রী টেরিজা আলবর, মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার, জাতিসংঘের কর্মকর্তা মিয়া সেপ্পো, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রধান জয়েন্দু ডি চলমান জাদুঘর ঘুরে দেখেছেন।