তথ্য অধিকার আইনে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে আদেশ আবার পেছাল

তথ্য কমিশন
ছবি: সংগৃহীত

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলাসংক্রান্ত পরিসংখ্যান চেয়ে বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে তথ্য অধিকার আইনে করা অভিযোগের বিষয়ে আদেশ আজ মঙ্গলবার হয়নি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে অভিযোগকারীর নাগরিকত্ব ও পরিচয়ের বিষয়ে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে তথ্য কমিশন। আগামী ৮ মার্চ আদেশের নতুন তারিখ দেওয়া হয়েছে।

দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মোট কত মামলা হয়েছে, কতজনকে আসামি করা হয়েছে ও কতজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, এসব তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে আবেদন করেছিলেন মানবাধিকারকর্মী সাদ হাম্মাদি। তবে এসব তথ্য প্রকাশ পেলে আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, এমন কারণ দেখিয়ে তাঁকে তথ্য দেয়নি পুলিশ।

পুলিশের কাছ থেকে তথ্য না পেয়ে আবেদনকারী সাদ হাম্মাদি অভিযোগ করেন তথ্য কমিশনে। গত ১১ জানুয়ারি এই অভিযোগের শুনানি করে কমিশন। দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে ২ ফেব্রুয়ারি আদেশের দিন ধার্য করা হয়। তবে ২ ফেব্রুয়ারি আদেশ দেওয়া হয়নি।

সেদিন আবেদনকারীকে মেইলে জানানো হয়, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে আদেশের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ২২ ফেব্রুয়ারি নতুন আদেশের দিন ধার্য করা হয়।

আজ কমিশনের অনলাইন কার্যক্রমে হাম্মাদি নিজে ও বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষে আইনজীবী তাইফুল সিরাজ অংশ নেন। শুরুতে প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ দুই পক্ষের কারও নতুন কিছু বলার আছে কি না, জানতে চান। দুই পক্ষই জানায়, নতুন কিছু বলার নেই।

মরতুজা আহমদ বলেন, ‘আবেদনটি দেখেছি৷ কমিশনে আলোচনাও করা হয়েছে। পুলিশ লিখিত বক্তব্যে একটি কথা উল্লেখ করেছে অভিযোগকারীর পরিচয় নিয়ে। অভিযোগকারী স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছে বাংলাদেশের আর বর্তমান ঠিকানা শ্রীলঙ্কার। ওনার স্থায়ী ঠিকানা কি পুলিশ যাচাই করেছে?’

আইনজীবী তাইফুল সিরাজ বলেন, আবেদনকারীর ঠিকানা যাচাই করার বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই।
মরতুজা আহমদ বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে অভিযোগকারীর নাগরিকত্ব ও পরিচয় যাচাই করে পুলিশ লিখিত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেবে। ৮ মার্চ আদেশের পরবর্তী তারিখ।

তাইফুল সিরাজ বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, আবেদনকারী শ্রীলঙ্কাতে থাকেন। তিনি খুবই সংবেদনশীল তথ্য চাচ্ছেন। এসব তথ্যের সঙ্গে আবেদনকারীর কোনো যোগসূত্র নেই।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য কমিশনার সুরাইয়া বেগম বলেন, পুলিশ তো চাইলে আবেদনকারীর শ্রীলঙ্কার ঠিকানা ও পরিচয় যাচাই করতে পারে। আবেদনকারী মিথ্যা পরিচয় দিচ্ছে কি না, সেটাও পুলিশ খোঁজ নিতে পারে।

লেখক, গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী সাদ হাম্মাদি ২০২১ সালের ৭ জুন পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। তিনি জানতে চান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর থেকে এ আইনে প্রতিবছর দায়ের করা মামলার সংখ্যা, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা এবং গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সংখ্যা কত। তথ্য না পাওয়ায় তিনি গত ১৮ জুলাই পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর আপিল আবেদন করেন। নির্ধারিত সময়ে আপিল আবেদনের জবাব না পাওয়ায় সাদ হাম্মাদি গত ১০ আগস্ট তথ্য কমিশনে অভিযোগ করেন।

সাদ হাম্মাদির তথ্য চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে তাঁকে একটি চিঠি দেয় পুলিশ। চিঠিতে বলা হয়, তথ্য অধিকার আইনের ধারা ৭-এর চ, ছ এবং ড উপধারা অনুযায়ী আবেদনকারীর তথ্য প্রকাশ করার মতো না। এসব তথ্য প্রকাশ পেলে আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, অপরাধ বৃদ্ধি পেতে পারে, জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, বিচারাধীন মামলার সুষ্ঠু বিচারকার্য ব্যাহত হতে পারে, কোনো অপরাধের তদন্তপ্রক্রিয়া এবং অপরাধীর গ্রেপ্তার ও শাস্তিকে প্রভাবিত করতে পারে।

বাংলাদেশের নাগরিক সাদ হাম্মাদি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক অফিসে (শ্রীলঙ্কা) কর্মরত। সাদ হাম্মাদি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইনে আমার যতটুকু পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে, তা দেওয়া হয়েছে। একজন সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় এসব তথ্য পেতে পারি।’