তামাক কোম্পানির ‘সিএসআর’ নিষিদ্ধ ও একই কর হার নির্ধারণের দাবি
তামাক কোম্পানিগুলোর করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এসবে কৃষকের তেমন একটা লাভ হয় না, বরং ক্ষতিই হয়। একই সঙ্গে সব ধরনের তামাকের ওপর একই করহার নির্ধারণেরও দাবি করেছেন তাঁরা।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে তামাকবিরোধী গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও তামাকবিরোধী গণমাধ্যম জোটের (আত্মা) যৌথ আয়োজনে প্রাক্-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তোলা হয়েছে। এতে তামাক কর ও দামসংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব করা হয়।
জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘যত কথা বলে যাচ্ছি নিয়ন্ত্রণের জন্য, ততই দেখা যাচ্ছে এর (তামাক) প্রচারণা আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। তামাক কোম্পানিগুলোর সিএসআর নিষিদ্ধ করা উচিত বলে মনে করি।’ তিনি বলেন, ‘তারা (কোম্পানিগুলো) বৃত্তি দেয়, কৃষকদের সহায়তার নামে কিছু ঋণ দেয়। এসবে তাদের খুব একটা লাভ হয় না বরং ক্ষতি হয় সেটি আমরা অনেক জায়গায় দেখেছি। এর চেয়ে বেশি লাভবান হতে পারেন, কৃষক যদি অন্য ফসল করেন।’
কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, ‘ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতে সরকারের ২ শতাংশ অংশীদারত্ব রয়েছে। এখানে সরকারের বেশ কয়েকজন পরিচালক রয়েছেন, যাঁরা নীতি নির্ধারণ করেন। সরকারকে আমরা বলেছি, এই অংশীদারত্ব প্রত্যাহারের জন্য। সেটা না করলে ওদের হাত এমনিতেই যে লম্বা, তারা প্রভাবিত করবেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন স্তর করেছে তাদের সুবিধার জন্য। সব ধরনের তামাকের ওপর একই করহার নির্ধারণ ও মূল্য বৃদ্ধি করলে তামাক গ্রহণে নিরুৎসাহিত হবে অনেকেই। ফলে তরুণ প্রজন্ম মাদক থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকতে পারবে।
আত্মার কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রজ্ঞার তামাক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার। এতে বলা হয়েছে, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যান। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা একই সময়ে তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের (২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা) চেয়ে অনেক বেশি।
বাজেট প্রস্তাবে আরও বলা হয়, তামাক কর ও মূল্য বাড়ানো হলে প্রায় ১৩ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবেন। দীর্ঘ মেয়াদে ৪ লাখ ৪৫ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লাখ ৪৮ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠীর অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।