তেঁতুলতলা মাঠকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে রাখতে হবে

কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে এখন দেওয়াল নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ
ছবি: সাজিদ হোসেন

রাজধানীর তেঁতুলতলা মাঠকে শিশুদের খেলার জন্য উন্মুক্ত স্থান হিসেবে রাখার দাবি জানিয়েছেন দেশের ৩৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক। ওই মাঠ রক্ষার আন্দোলনে সক্রিয় সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলেকে ধরে নিয়ে থানায় ১৩ ঘণ্টা আটকে রাখার ঘটনায় দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের উল্টো দিকের গলির মুখের তেঁতুলতলা মাঠে কলাবাগান থানার স্থায়ী ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ায় গতকাল রোববার ওই এলাকার বাসিন্দা সৈয়দা রত্না ও তাঁর কলেজপড়ুয়া ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। দিনভর তাঁদের কলাবাগান থানায় আটকে রাখা হয়। বিক্ষোভের মুখে রাত সাড়ে ১২টার দিকে মা–ছেলেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

আজ সোমবার ৩৬ নাগরিকের বিবৃতিতে বলা হয়, সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলেকে কোনোরকম আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে আইনসিদ্ধ অভিযোগ ছাড়া দীর্ঘ ১৩ ঘণ্টার বেশি সময় আটক রাখা দেশের সংবিধান ও আইনের ন্যক্কারজনক লঙ্ঘন ও বেআইনি। তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পর গতকাল সারা দিন বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কেন যোগাযোগ করা যায়নি, তা স্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যার দাবি রাখে।

থানা ও মাঠে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা মা–ছেলেকে আটকের বিষয়ে এবং মাঠে থানা নির্মাণের আইনগত বৈধতার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বলে দাবি করা হয়েছে বিবৃতিতে। বলা হয়েছে, দুজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং মাঠ দখলের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কলাবাগান থানা যে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিরই নিন্দনীয় প্রতিফলন ঘটিয়েছে, তা স্পষ্ট।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নাগরিকদের ন্যূনতম বাক্‌স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক চর্চার অধিকার ও মানবাধিকারের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানা কর্তৃপক্ষের এমন অবৈধ আটক ও মুচলেকা গ্রহণের আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

তেঁতুলতলা মাঠটি উন্মুক্ত স্থান ও মাঠ হিসেবে রাখার এবং সেখানে থানা স্থাপনের চলমান কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মাঠে থানা বা অন্য কোনো স্থাপনা হবে না। মাঠে শিশুরা খেলবে, কলাবাগান থানা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও রাজউককে অনতিবিলম্বে সেই প্রতিশ্রুতি প্রদান করতে হবে।’

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, সুলতানা কামাল, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী, অর্থনীতিবিদ ও পিপিআরসির নির্বাহী সভাপতি হোসেন জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর সালেহউদ্দিন আহমেদ, সেন্ট্রাল উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পারভীন হাসান, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মানবাধিকারকর্মী মো. নূর খান লিটন, আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতিয়ারা নাসরীন, অধ্যাপক এম এম আকাশ, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, লেখক রেহনুমা আহমেদ, গবেষক মেঘনা গুহঠাকুরতা, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, নারীপক্ষের সদস্য শিরিন হক, ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইমরান রহমান, ব্লাস্টের অনারারি ডিরেক্টর সারা হোসেন, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফেরদৌস আজিম, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসারিয়াল গবেষণা সহযোগী স্বপন আদনান প্রমুখ।