তেঁতুলতলা মাঠে থানা হবে না, খেলার মাঠই থাকছে

তেঁতুলতলা মাঠ।ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে আর কোনো নির্মাণকাজ হবে না। জায়গাটি যেভাবে ছিল, সেভাবেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আজ বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

ওই মাঠ রক্ষার দাবিতে অনেক দিন ধরে আন্দোলন চলছিল। এর মধ্যে গত রোববার মাঠটি রক্ষার দাবিতে আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্না ও তাঁর কিশোর ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে ১৩ ঘণ্টা কলাবাগান থানায় আটকে রাখে। পরে প্রতিবাদের মুখে মধ্যরাতে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর আন্দোলনের গতি আরও বাড়ে। এমন অবস্থায় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিল। এর অর্থ হলো এখানে আর থানা হচ্ছে না। খেলার মাঠই থাকছে।

তবে জায়গাটি পুলিশেরই থাকছে বলে জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, এই জায়গার জন্য তাঁরা আবেদন করেছিলেন ২০১৭ সালে। এত দিন পর এসে জায়গাটি তাঁদের দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেখা গেল, এই এলাকায় একদম খেলার মাঠ, খোলা জায়গাই নেই। সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পরামর্শ দিয়েছেন, যেহেতু সেখানে খেলার খালি জায়গা নেই, বিনোদনের জন্য কোনো কিছু নেই, সে জন্য উনি বলেছেন, ওটা পুলিশের জমি, পুলিশেরই থাক। যেটা যে অবস্থায় অবস্থায় আছে, সেই অবস্থায় থাকুক। এখানে আর কোনো কনস্ট্রাকশন যেন না করা হয়। যেটা যেভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেভাবেই চলতে থাকুক। এটাই হলো সিদ্ধান্ত।

তাহলে জমিটি পুলিশেরই থাকবে? জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জমি তো পুলিশেরই।

তাহলে ভবিষ্যতে কি এখানে নির্মাণকাজ হবে? জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন পরিষ্কার করে বললাম, আগে যেভাবে ব্যবহৃত হতো, সেভাবেই এলাকার লোক ব্যবহার করবেন। আর প্রাচীর খুব বেশি হয়নি। যদি কোনো অসুবিধা হয়, সেগুলো আমরা দেখব। কিন্তু জায়গাটি পুলিশের, পুলিশেরই থাকবে। রক্ষণাবেক্ষণ পুলিশই করবে।’

তাহলে কলাবাগান থানা কোথায় হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সেটা এখন আমরা দেখব। ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যতে। এখন সেখানে আপাতত কিছু হচ্ছে না।’

এদিকে এর আগে গতকাল বুধবার রাতে তেঁতুলতলা মাঠে দেয়াল তৈরির কাজ শেষ করেছে পুলিশ। মাঠটি রক্ষার দাবিতে এলাকাবাসী, পরিবেশবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের আন্দোলনের মধ্যেই পুলিশ দেয়াল তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছে। এলাকাবাসী বলছেন, গতকাল প্রতিবাদ-সমাবেশ চলাকালে দেয়াল তৈরির কাজ বন্ধ ছিল। সবাই চলে যাওয়ার পর আবার কাজ শুরু হয়। রাতের মধ্যেই দেয়াল তৈরির কাজ শেষ করে পুলিশ।

আরও পড়ুন

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তেঁতুলতলা মাঠের উত্তর পাশের এলাকাজুড়ে দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। শুধু এক পাশে সামান্য জায়গা খালি রাখা হয়েছে। সেখান দিয়ে মাঠে ঢোকা যায়। মাঠের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন পুলিশ সদস্য সেখানে বসে আছেন। মাঠের ভেতর ও দেয়াল ঘেঁষে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে নির্মাণসামগ্রী।

গতকাল মাঠটির সীমানা ঘেঁষে ১৪টি দেশি প্রজাতির গাছ রোপণ করেন আন্দোলনকারীরা। গাছগুলো সেভাবেই রয়েছে।

তেঁতুলতলা মাঠটি স্কয়ার হাসপাতালের উল্টো দিকের একটি গলিতে। এটি মূলত একটি খালি জায়গা, যা পুলিশ জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়ে কলাবাগান থানার ভবন নির্মাণ করছিল।