দাফনের ঠিক আগমুহূর্তে কেঁদে উঠল শিশুটি

শিশু প্রতীকী ছবি।

ভোর পৌনে পাঁচটায় কন্যাশিশুটির জন্ম হয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয় মৃত্যুর সনদ। বাবা ইয়াসিন শিশুটিকে নিয়ে যান আজিমপুর কবরস্থানে। সেখানে দাফনের খরচ পোষাতে না পেরে শিশুটিকে নিয়ে যান রায়েরবাজার কবরস্থানে। কবর খোঁড়ার কাজ চলছিল তখন। এমন সময় শিশুটি নড়েচড়ে ওঠে, শুরু করে কান্নাকাটি। এরপর শিশুটিকে নিয়ে আবার ঢাকা মেডিকেলে ছুটে আসেন ইয়াসিন।

শিশুটি এখন চিকিৎসাধীন আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউতে)।

আজ শুক্রবার ঘটে যাওয়া এই ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলেছে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ।

ভোরে হাসপাতালের গাইনি বিভাগে শিশুটির জন্ম দেন শাহিনুর বেগম (২৭) নামের এক মা। তাঁদের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মালঙ্গা গ্রামে। তুরাগের নিসাতনগর এলাকায় থাকেন তাঁরা। বাবা ইয়াসিন বিআরটিসির বাসচালক। এই শিশুটি এই দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান।

ইয়াসিন প্রথম আলোকে বলেন, স্ত্রী শাহিনুর বেগমকে গত বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি করান তিনি। চিকিৎসকেরা জানান, শাহিনুরের উচ্চ রক্তচাপ আছে, সন্তান জন্ম না নেওয়া পর্যন্ত কমবে না। বুধবার রাতেই তাকে লেবার রুমে নিয়ে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রসব না হওয়ায় তাঁকে ১১০ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয়। এরপর আজ ভোরে শিশুটির জন্ম হয়।

ইয়াসিন বলেন, চিকিৎসকেরা তার বাচ্চাকে মৃত ঘোষণার পর তিনি আজিমপুর কবরস্থানে দাফনের জন্য নিয়ে যান। সেখানে কবর দিতে ১ হাজার ৫০০ টাকা লাগে। সেই টাকা না থাকায় কবরস্থানের লোকজনের পরামর্শেই রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নিয়ে যান। সেখানে ৫০০ টাকা ফি দেওয়ার পর নবজাতকটির জন্য কবর খোঁড়া শুরু হয়। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ যেই প্যাকেটে করে হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেটি নড়তে থাকে এবং তার কান্নার শব্দ শুনতে পাই।’ ইয়াসিন প্যাকেটটি খুলে দেখেন, শিশুটি দিব্যি জীবিত। তিনি বিষয়টি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তখন আশপাশের লোকজনও জড়ো হয়ে যান। সন্তানকে তিনি আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে মৃত ঘোষণা করে যে সনদটি দেওয়া হয়েছিল সেটি চিকিৎসকেরা নিয়ে গেছেন।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, নবজাতকটি ভালো আছে। তাকে ভর্তি রাখা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। কেন এমন হয়েছে সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে।