দারোয়ান জিয়ারুল স্বপ্ন দেখেন বিসিএস ক্যাডার হওয়ার
রাজধানীর উত্তরার জমজম টাওয়ারের সামনে ১১ নম্বর চৌরাস্তা। একদিকে সোনারগাঁও জনপদ, অন্যদিকে গরীব-ই-নেওয়াজ সড়ক। সারা দিনই থেমে থেমে যানজট লেগে থাকে এখানে। যানবাহনের হর্নের গগনবিদারী শব্দ আর মানুষের কোলাহলে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই সরগরম থাকে ওই এলাকা। এমন এক পরিবেশে রোববার দুপুর ১২টার দিকে হাতে বই নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন এক যুবক। গরমে ঘামছেন, তবু পড়াশোনা চলছে তাঁর।
ওই যুবক বসেছিলেন জমজম টাওয়ারের উল্টো পাশে একটি ১০ তলা ভবনের সামনে। পরনের পোশাক দেখে বোঝা গেল, তিনি দারোয়ান। সিঁড়ির গোড়ায় বসে মনোযোগ দিয়ে পড়া চলছিল তাঁর। এর মধ্যে কোনো গাড়ি বা মানুষজন এলে ছুটে যাচ্ছেন অভ্যর্থনা জানাতে। আবারও ফিরে আসছের বইয়ের কাছে।
আলাপে জানা গেল, তাঁর নাম জিয়ারুল ইসলাম। বাড়ি চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদা উপজেলায়। তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে এবার কামিল (মাস্টার্স সমমান) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। ছয় বছর আগে রাজধানীতে আসেন তিনি। কাজ নেন ভবনটির একটি রেস্তোরাঁর দারোয়ান হিসেবে। মাস শেষে যা বেতন পান, তার বেশির ভাগটা পাঠিয়ে দেন গ্রামে। সেই টাকায় চলে বাবা, মা ও এক ভাইয়ের সংসার।
জিয়ারুলের স্বপ্ন বিএসএস ক্যাডার হওয়ার। ২০১৬ সালে ঢাকায় এসে তিনি দারোয়ানের কাজ শুরু করেন। কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা করে ফাজিল পাস করেন (স্নাতক সমমান)। এবার কামিল পরীক্ষা দিয়েছেন। এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন সরকারি চাকরির। বললেন, ‘আমাদের মতো গরিব মানুষের স্বপ্ন দেখা সহজ। কিন্তু বাস্তবায়ন অনেক কঠিন।’ কিন্তু তিনি চেষ্টা চালিয়ে যেতে যান।
জিয়ারুল বলেন, তাঁর মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকা। রেস্তোরাঁয় আসা লোকজনের কাছ থেকে বকশিশ পেয়ে এর সঙ্গে যোগ হয় আরও দুই-তিন হাজার টাকা। তাঁর থাকা ও খাওয়ার খরচ নেই। তাঁর ডিউটি শুরু হয় সকাল সাতটায়, চলে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত। এর মধ্যেই চলে তাঁর পড়াশোনা। বাজারে পাওয়া কিছু চাকরি সহায়ক বই ও মুঠোফোনের ইন্টারনেট ব্যবহার করে চলে তাঁর পড়াশোনা।
এবারের ৪৪তম বিসিএসে অংশ নিতে পারেননি জিয়ারুল। আগামীবার থেকে অবশ্যই পরীক্ষা দেবেন বলে জানালেন। বিসিএস বা কোনো সরকারি চাকরিতে অনেক প্রতিযোগিতা, প্রচুর পড়তে হয়। এভাবে পড়ে পারবেন কি না, প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘কথায় বলে না—যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ! আমি এর শেষ দেখব। চেষ্টা করে যাব।’