নটর ডেম ছাত্রের মৃত্যু: ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৯ চালক বরখাস্ত

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন ঢাকার বিভিন্ন স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর গুলিস্তানে গাড়িচাপায় নটর ডেম কলেজছাত্রের মৃত্যুর ঘটনার জের ধরে চাকরি হারিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ জন গাড়িচালক। নিজেদের অনুকূলে বরাদ্দ থাকা গাড়ি বহিরাগত লোকদের দিয়ে চালানোর দায়ে তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া একজনের গাড়ি আরেকজনের হাতে তুলে দেওয়ার দায়ে সংস্থার পরিবহন তত্ত্বাবধায়ক ফারুক আহমেদকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দক্ষিণ সিটির সচিব দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ৯ চালকের মধ্যে ৭ জন ময়লাবাহী গাড়ি (ভারী) চালক ছিলেন। বাকি দুজন সংস্থার হালকা গাড়ি চালাতেন। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ময়লাবাহী গাড়িচালকেরা হলেন কাউছার আলী, বেলায়েত হোসেন, ফরিদ আহমেদ, মো. আবদুল্লাহ, জামাল উদ্দিন-২, কবির হোসেন-২ ও রবিউল আলম। আর হালকা গাড়িচালকেরা হলেন আজিম উদ্দিন ও নূর জালাল শিকদার।

সংস্থার সচিব দপ্তর সূত্র বলছে, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ ও অদক্ষতার অভিযোগে ৮ ডিসেম্বর এসব চালককে বরখাস্ত করা হয়। তবে এ তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশে সংস্থাটির পক্ষ থেকে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। এমনকি সাময়িক বরখাস্তের অফিস আদেশগুলো সংস্থার সিস্টেম অ্যানালিস্টকে দক্ষিণ সিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা প্রকাশ করা হয়নি।

চালকদের বরখাস্তের বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটির মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। সে কারণে তিনি কিছুই বলতে পারছেন না।

তবে দুপুরে বরখাস্ত হওয়া চালকদের বিষয়ে জানতে পেরেছে প্রথম আলো। সংস্থার সচিব স্বাক্ষরিত অফিস আদেশগুলোতে বলা হয়, এসব চালকের অনুকূলে গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হলেও নিজে না চালিয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গাড়িচালক নন, এমন ব্যক্তিকে দিয়ে অবৈধভাবে গাড়ি চালনা করে আসছিলেন তাঁরা। নিয়মিত গাড়িচালক গাড়ি না চালিয়ে অন্য কোনো সাধারণ গাড়িচালক কর্তৃক ভারী গাড়ি চালনার জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে এবং প্রাণহানিসহ জানমালের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।

চালকদের এমন কার্যকলাপ করপোরেশনের শৃঙ্খলাপরিপন্থী এবং সংস্থার সুনাম চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। সাময়িক বরখাস্তকালীন এসব চালক কেবল বিধি মোতাবেক খোরাকি ভাতা পাবেন।

গত ২৪ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানের মৃত্যুর পর সংস্থার পরিবহন বিভাগের অনিয়ম ও দুর্নীতি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সোচ্চার হন। শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও সংস্থার পরিবহন পুলের (পরিবহন বিভাগ) অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের চিত্র উঠে আসে।

এরপরই মেয়র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিজেরা গাড়ি না চালিয়ে অন্যদের দিয়ে গাড়ি চালানো ব্যক্তিদের শনাক্ত করে প্রাথমিকভাবে ৯ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানকে চাপা দেওয়া দক্ষিণ সিটির ময়লাবাহী গাড়িটি চালাচ্ছিলেন বহিরাগত এক ব্যক্তি। ওই গাড়ি করপোরেশনের চালক (ভারী) ইরান মিয়ার অনুকূলে বরাদ্দ ছিল। কিন্তু ইরান মিয়াকে গাড়িটি হস্তান্তর না করে পরিবহন পুলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বহিরাগত হারুন নামের এক ব্যক্তির হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেন। হারুন অবশ্য ওই গাড়ি নিজে না চালিয়ে বহিরাগত রাসেল নামের এক ব্যক্তির কাছে গাড়িটি তুলে দেন। পুলিশ বলছে, নটর ডেম কলেজ শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়ার সময় দক্ষিণ সিটির ময়লাবাহী গাড়ির চালকের আসনে ছিলেন রাসেল।

দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, পরিবহন শাখায় দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত সমস্যার সমাধানে তারা হাত দিয়েছেন। এখন থেকে পরিবহন শাখায় কোনো প্রকার অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। যার নামে গাড়ি বরাদ্দ তাকেই গাড়ি চালাতে হবে। এ জন্য তদারকি জোরদার করা হয়েছে। এখানে ন্যূনতম ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।