পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকায় পানির সংকট

পুরান ঢাকার চাঁদনীঘাটের ওয়াটার ওয়ার্কস থেকে পানির উত্পাদন অস্বাভাবিক রকম কমে গেছে। এতে বিভিন্ন এলাকায় দিনে ও রাতে স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় পানির সরবরাহ কমতে শুরু করেছে। ফলে পুরান ঢাকার ওয়াসা মড জোন-২-এর অন্তর্ভুক্ত বেশ কয়েকটি এলাকায় তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে।ওয়াসা কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুরান ঢাকার ওয়াসা মড জোন-২-এর অন্তর্ভুক্ত এলাকায় এখন পানির চাহিদার পরিমাণ প্রতিদিন ২৪ কোটি লিটার। এই চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন ২১ দশমিক ৩৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। ওয়াসার হিসাবে, চাহিদার বিপরীতে এখনই প্রায় তিন কোটি লিটার পানির উত্পাদন কম হচ্ছে। এ ছাড়া নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকালে ওয়াটার ওয়ার্কসের ছয়টি পাম্প থেকে বুড়িগঙ্গার শোধন করা পানির উত্পাদনের পরিমাণ প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি লিটার। এই উত্পাদন কমে এখন এক কোটি ৫২ লাখ লিটারে দাঁড়িয়েছে।এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে ওয়াসার প্রকৌশলীরা একদিকে পানির সরবরাহ বন্ধ রেখে অন্য একদিকে পানির পাম্প সচল করছেন। আবার অন্যদিকে পানির পাম্প বন্ধ করে দিয়ে অন্য একটি সংযোগ চালু করছেন। এভাবেই দুই সপ্তাহ ধরে সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশঙ্কা, আসন্ন শীত ও শীতের পরপরই গ্রীষ্ম মৌসুমে পুরান ঢাকায় পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।জয়নাগ রোডের বাসিন্দা মোহাম্মদ মাসুম বলেন, ‘একমাস ধরে দেখছি, তিন দিন পানি থাকলে তিন দিন থাকে না। এখন দিনে দুই ঘণ্টা থাকলে পাঁচ ঘণ্টাই থাকে না।’ হরনাথ ঘোষ রোডের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, সব সমস্যা সহ্য করা যায়, কিন্তু পানির সমস্যা সহ্য হয় না।পানির সংকট: সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরান ঢাকার লালবাগের জয়নাগ রোড, হরনাথ ঘোষ রোড, চাঁদনীঘাট, খাজে দেওয়ান প্রথম ও দ্বিতীয় লেন, অরফানেজ রোড ও উর্দু রোডের আংশিক এলাকায় তীব্র পানিসংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগীরা চাঁদনীঘাটের ওয়াসা কার্যালয়ে গিয়ে দিনে-রাতে সমানে অভিযোগ জানাচ্ছে।এ বিষয়ে ওয়াসার প্রকৌশলীরা জানান, বুড়িগঙ্গায় স্বাভাবিক পানির প্রবাহকালে চাঁদনীঘাটের ওয়াটার ওয়ার্কসে গড় পানির উত্পাদন দুই কোটি লিটার এবং এর বেশিও হয়। কিন্তু কয়েক দিন ধরে এই উত্পাদন প্রায় ৫০ লাখ লিটার কমে গেছে। গতকাল চাঁদনীঘাটের ওয়াটার ওয়ার্কসে পানির উত্পাদন ছিল এক কোটি ৫২ লাখ লিটার। ওয়াসার প্রকৌশলী আব্দুল ওয়াহাব জানান, চাহিদার তুলনায় পানির উত্পাদন কমে যাওয়ার কারণেই এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।যে কারণে পানি কমছে: চাঁদনীঘাটে কর্মরত ওয়াসার প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, ওয়াটার ওয়ার্কসের ছয়টি পানির পাম্প বুড়িগঙ্গা থেকে পানি নেয়। এই ছয়টি পাম্পের মধ্যে তিনটি পাম্প নদীর ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ হয়ে গেছে। এখন তিনটি পাম্প থেকে পানি আসছে। ফলে পানির উত্পাদন কমে গেছে। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যায়। এতেও পানির উত্পাদন কম হয়। এবার পানির স্তর অনেক আগেই নামতে শুরু করেছে।প্রকৌশলীরা জানান, শীত ও গ্রীষ্মের মৌসুমে সাধারণত পানির উত্পাদন কম হয়। এবার এখনই পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ওয়াসার কর্মকর্তারাও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কয়েক দিন ধরে লালবাগের সাতটি এলাকা থেকে একনাগাড়ে তীব্র পানিসংকটের অভিযোগ এসেছে ওয়াসা কার্যালয়ে। এ বিষয়ে প্রকৌশলীরা বলেন, পাম্পের চারদিকে ময়লা আবর্জনার স্তূপ জমে যায়। নিয়মিত এসব পরিষ্কার করা হয়। এর পরও পলিথিন, মশারির সুতা ও ময়লা চলে আসে। এর ফলে তিনটি পাম্প বন্ধ হয়ে গেছে। পাম্পগুলো সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।ওয়াসার উদ্যোগ: ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল করিম জানান, এমনিতেই ওয়াসার চার-পাঁচজন ডুবুরি রয়েছে। এখন এ কাজে আরও ডুবুরি নিয়োগ করে ময়লা সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যেই ময়লা সরানো হয়। কিন্তু ময়লার পরিমাণ এত বেশি যে, এগুলো অপসারণের জন্য কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। প্রকৌশলী আব্দুল ওয়াহাব বলেন, সার্বক্ষণিক পাম্প সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমের কথা চিন্তা করে আরও দুটি গভীর নলকূপ বসানো হবে। এরই মধ্যে গজমহলে একটি বসানো হয়েছে।