পুরোনো বাসে চালু নতুন সেবা

রাজধানীতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশনের অংশ হিসেবে যাত্রা শুরু হল ‘ঢাকা নগর পরিবহন’কোম্পানির বাস চলাচল। উদ্বোধন করেন ঢাকার দুই মেয়র আতিকুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নূর তাপস। মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড, ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

ঢাকায় অবশেষে রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে বাস সেবা চালু হলো। আজ রোববার কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে রাজধানী হয়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর রুটে ৫০টি বাস দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এই সেবার উদ্বোধন করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে ঢাকা নগর পরিবহন।

বাস সেবায় বিশৃঙ্খলা দূর করতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ২০১৫ সালে এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ছয় বছর পর এসে তা আলোর মুখ দেখল, যদিও আংশিকভাবে। আবার নতুন বাস নয়, পুরোনো বাস দিয়ে চালু হলো এই সেবা।

সেবাটির উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ডিপোসংলগ্ন যাত্রীছাউনিতে আজ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ট্রান্সসিলভার একটি বাস ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে। মেয়ররা টিকিট কেটে বাসে ওঠেন।

যাত্রা শুরু হলো ‘ঢাকা নগর পরিবহন’কোম্পানির বাস চলাচল
ছবি: প্রথম আলো

বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি জানিয়েছে, ৫০টি বাসের মধ্যে বিআরটিসির দোতলা বাস রয়েছে ৩০টি। আর ট্রান্সসিলভা নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাস রয়েছে ২০টি। কমিটি আগে জানিয়েছিল, বেসরকারি বাসগুলো নতুন হবে। তবে আজ দেখা গেছে, বাসগুলো আসলে পুরোনো।

ঢাকা নগর পরিবহনের বাস কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, গুলিস্তান, মতিঝিল, সাইনবোর্ড হয়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত রুটে চলাচল করবে। নির্ধারিত জায়গা ছাড়া এই বাস থামবে না। টিকিট ছাড়া যাত্রীরা বাসে উঠতে পারবেন না। কোম্পানির অধীনে থাকা বেসরকারি বাসের রং করা হয়েছে সবুজ। ঘাটারচর থেকে চিটাগং রোড পর্যন্ত ভাড়া ৫৫ টাকা।

‘ঢাকা নগর পরিবহন’ কোম্পানির একটি বাস
ছবি: প্রথম আলো

সরেজমিনে দেখা যায়, বাসে উঠতে যাত্রীদের লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হচ্ছে। একটি ডিজিটাল যন্ত্রে যাত্রীর গন্তব্য জেনে বোতাম চাপলেই বেরিয়ে আসছে টিকিট। তিনটি বাসে চড়ে দেখা যায়, যাত্রীরা যতটুকু দূরত্বে যাচ্ছেন, ততটুকুর ভাড়া দিতে হচ্ছে। তবে বাসের ভেতরে পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি ছিল। একটি বাসে জানালার কাচ ভাঙা দেখা যায়।

মাসুদুর রহমান নামের এক যাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, মোহাম্মদপুরের বসিলা থেকে এলিফ্যান্ট রোড পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে ১০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। যদিও এ পথে এত দিন ১৫ টাকা ভাড়া দিতে হতো। কারণ, আগে বাসে যাত্রীরা যেখানেই নামুক, একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত ভাড়া আদায় হতো।

ঢাকা নগর পরিবহনে যুক্ত হয়েছে বিআরটিসির বাসও
ছবি: প্রথম আলো

মো. কিবরিয়া নামের আরেক যাত্রী বলেন, ঢাকায় যে বাস সেবা এত দিন ছিল, তার চেয়ে এটি ভালো। মান আরও বাড়িয়ে সেবাটি বিস্তৃত করতে হবে।

‘পুরো ঢাকায়’ হবে এই সেবা

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আপনারা ত্রুটি-বিচ্যুতি অবশ্যই দেখিয়ে দেবেন। আমরা যাচাই-বাছাই করে সেগুলো সংশোধন করব।’ তিনি বলেন, ৫০টি বাস দিয়ে সেবাটি চালু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ১০০টি বাস নামবে। ২০২৩ সালের মধ্যে পুরো ঢাকায় এই সেবা চালু করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে আনিসুল হক যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাতে ঢাকার পুরোনো, লক্কড়ঝক্কড় ও জীর্ণ বাসগুলোকে সরিয়ে চার হাজার নতুন বাস নামানোর কথা বলা হয়েছিল। একটি রুটে একটি কোম্পানির অধীনে চালানো হলে বাসে বাসে প্রতিযোগিতা রোধ হবে, দুর্ঘটনা কমবে, শৃঙ্খলা ফিরবে—এ উদ্দেশ্য থেকেই রুটভিত্তিক কোম্পানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।