২৫০ বোতল ফেনসিডিল রাখার দায়ে দুই দশক আগে ঝিনাইদহের বাদল কুমার পালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। বিচারিক আদালতের এই দণ্ড ও সাজা বহাল রেখেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
হাইকোর্টের রায়ে ফেনসিডিল বহন বা রাখা আইনের বিধান (১৯৯০ সালের) অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয় উল্লেখ করে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল মঞ্জুর করে আজ মঙ্গলবার রায় দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায় বাতিল করে এ রায় দেওয়া হয়।
ফেনসিডিল একসময় কাশির সিরাপ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরে মাদক হিসেবে দেশে এর ব্যবহার শুরু হয়। নেশা উদ্রেককারী কোডেইন–সমৃদ্ধ ফেনসিডিল ১৯৮০ সাল থেকে দেশে নিষিদ্ধ। এ অবস্থায় ১৯৯৭ সালের ৫ নভেম্বর যশোরের তাহেরপুরের মল্লিকবাড়ির সামনে থেকে ২৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ বাদল কুমার পালকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বাদলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলায় ২০০০ সালের ১৩ নভেম্বর যশোরের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল–১ রায় দেন।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে বাদলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এর বিরুদ্ধে ২০০১ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন তিনি। শুনানি নিয়ে ২০০৩ সালের ১২ মার্চ হাইকোর্ট রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ে খালাস পান তিনি। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রায় স্থগিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে রাষ্ট্রপক্ষ নিয়মিত আপিল করে।
রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর ১৯ জানুয়ারি শুনানি শেষে মঙ্গলবার এ রায় দেওয়া হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তী নুরুল।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, ফেনসিডিলে কোডেইন ফসফেট আছে। আফিম থেকে উদ্ভূত ‘কোডেইন ফসফেট’, যা ১৯৯০ সালের আইন এবং বর্তমান আইনেও নিষিদ্ধ। যখন মাদক হিসেবে ফেনসিডিলের ব্যবহার করা শুরু হলো, তখন উৎপাদনকারী চক্র এর সঙ্গে সিউডোফেড্রিন ব্যবহার শুরু করে।
বিশ্বজিৎ দেবনাথ আরও বলেন, এ–জাতীয় ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর কল্যাণার্থে (থেরাপিউটিক পারপাস) রোগ উপশম ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে। তবে মাদক হিসেবে যখন নেওয়া হয়, তখন বিভিন্ন রোগসহ এর নেতিবাচক দিকগুলো শুনানিতে উল্লেখ করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিগুলো আপিল বিভাগ গ্রহণ করেছেন মনে করি। হাইকোর্টের রায়ে ফেনসিডিল রাখা ও বহন বেআইনি তথা শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয় বলা হয়েছিল। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করেছেন। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে জানা যাবে।