বাস ভাড়া করে ডাকাতি, বাধা দেওয়ায় খুন হন রবিউল

রবিউল ইসলাম লস্কর
ছবি: সংগৃহীত

ডাকাত দলের ২০-২২ জন সদস্য মিলে একটি বাস ভাড়া করেন। যাত্রী সেজে তাঁরাই বাসে বসে থাকেন। পরে সাধারণ মানুষ সেই বাসে উঠলে তাঁদের কাছ থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নেন। পুলিশ বলছে, এমন এক ডাকাত দলের হাতে সাভারের নবীনগরে চলন্ত বাসে খুন হন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম লস্কর (৪২)। পরে রবিউলের মরদেহ সাভারের বলিয়ারপুরে যমুনা ন্যাচারাল পার্কের পাশে ফেলে দেওয়া হয়।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানিয়েছে, এ ঘটনায় ডাকাত দলের প্রধান পটুয়াখালীর বসির মোল্লাকে গ্রেপ্তার করলে হত্যাকাণ্ডের কারণ বেরিয়ে আসে। পরে বসিরের তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর আট সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন শেখ হাফিজ (৩৫), আনোয়ার হোসেন (৩৫), আমির হোসেন (২৮), আল আমিন (২৮), জুয়েল (৩২), মো. নঈম (২২), তপন (২৮) ও নাজমুল (৩০)।

এ নিয়ে বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে পিবিআইর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ৫ অক্টোবর রবিউল মিরপুরের ভাড়া বাসা থেকে আশুলিয়ার ডিইপিজেড এলাকার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বের হন। পরে রাত ১২টার দিকে রবিউলের মুঠোফোনে তাঁর মা ফোন করলে এক ব্যক্তি বলেন রবিউলকে খুন করা হয়েছে। বলা হয়, লাশটি হেমায়েতপুর ও আমিনবাজারের মধ্যবর্তী একটি জায়গায় রাখা হয়েছে। পরদিন বিকেলে পুলিশ যমুনা ন্যাচারাল পিকনিক স্পটের কাছ থেকে রবিউলের লাশ উদ্ধার করে।

পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘গত ২০ বছর ধরে বসির ডাকাতি করছেন। আশুলিয়ায় একটি মামলায় ২৬ মাস জেল খাটার পর তিন মাস আগে ছাড়া পেয়ে অভিনব পদ্ধতিতে ডাকাতি শুরু করেন তিনি। বসির পুরো বাস কয়েক দিনের জন্য ভাড়া নেন। এরপর তাঁর দলের চারজন সদস্যকে ডেকে আনেন। তাঁরা প্রত্যেকে আরও তিন–চারজন করে নিয়ে আসেন। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, বসির নিজেদের ২০-২২ জন সদস্যকে বাসে নিয়ে যাত্রা শুরু করেন।

সাধারণত যাত্রীরা অনেক যাত্রী দেখে বাসে ওঠেন। বাসে ওঠার পর তাঁদের সর্বস্ব কেড়ে নেওয়া হতো। এরপর যাত্রীকে তাঁদের সুবিধামতো জায়গায় নামিয়ে দেওয়া হতো।’
বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ৪ অক্টোবর ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে নিরালা পরিবহনের একটি বাস তিন দিনের জন্য ভাড়া নেন ডাকাত দলের প্রধান বসির। বাসটি ভাড়া নেওয়ার পর বসির ডাকাত দলের অন্য সদস্যদের নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা হন। নিরালা পরিবহনের স্টিকার তুলে তাতে ঢাকা-দৌলতদিয়া-খুলনা লেখেন। এ সময় গরু ব্যবসায়ীসহ কয়েকজনের কাছে ডাকাতি করে দৌলতদিয়ায় রাতভর অবস্থান করে বসিরের দল। পরদিন ৫ অক্টোবর দৌলতদিয়া থেকে ঢাকায় ফেরার পথে সাভার থেকে রবিউল ইসলামকে বাসে তোলেন তাঁরা।

পিবিআই প্রধান বলেন, ৫ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে নবীনগর থেকে রবিউলকে বাসে তোলা হয়। বাসে ওঠার পর ডাকাতির সময় রবিউল বাধা দেন। ডাকাত দলের সদস্যরা কয়েকজন রবিউলকে চেপে ধরেন এবং কাপড় দিয়ে মুখ বাঁধেন। এতেও কাজ না হওয়ায় ডাকাত দলের নেতা বসির তাঁর হাতে থাকা হুইল রেঞ্জ দিয়ে রবিউলকে আঘাত করেন। এতে বাসের মধ্যেই মারা যান রবিউল। এরপর নির্জন স্থান দেখে রবিউলের মরদেহ বলিয়ারপুর যমুনা ন্যাচারাল পার্কের কাছে ফেলে চলে যান ডাকাতেরা। বাসায় ফিরতে দেরি দেখে রাত ১২টার দিকে রবিউলের নম্বরে তাঁর মা ফোন করেন। অপর প্রান্ত থেকে এক অপরিচিত ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে জানান, এই নম্বরের মালিক খুন হয়েছেন। তাঁর লাশ হেমায়েতপুর ও আমিনবাজারের মধ্যকার একটি জায়গায় রাখা হয়েছে। এই বলে কল কেটে দেন ডাকাত দলের সদস্যরা। এরপর রবিউলের মুঠোফোনটি ভেঙে ড্রেনে ফেলে দেন তাঁরা। ৬ অক্টোবর রবিউলের মরদেহ উদ্ধারের পর অজ্ঞাত হিসেবে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায় পুলিশ। খবর পেয়ে রবিউলের পরিবার মর্গে গিয়ে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে।

পরে এ হত্যার ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। মামলার তদন্ত করেন উপপরিদর্শক মো. সালেহ ইমরান ও তাঁর দলের সদস্যরা। গোয়েন্দা তৎপরতা ও প্রযুক্তির সহায়তায় ১৩ অক্টোবর ডাকাত দলের প্রধান বসিরকে সাভার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সালেহ ইমরান সাংবাদিকদের জানান, বুধবার (১৪ অক্টোবর) ডাকাত দলের প্রধান বসির মোল্লা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর ডেমরা, ঢাকার উপকণ্ঠ সাভার ও ধামরাইয়ে অভিযান চালিয়ে আরও আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে আল আমিন, জুয়েল, হাফিজ, নঈম ও আনোয়ার বৃহস্পতিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত জবানবন্দি গ্রহণ করে বসিরসহ ছয়জনকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। আমির, তপন ও নাজমুলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।