বাহারি নামের বড় গরু নিয়ে ক্রেতাদের আগ্রহ কম
বরিশালের মুলাদী থেকে প্রায় ৩৫ মণ ওজনের ‘রাজা বাবু’কে নিয়ে রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে এসেছেন হেমায়েত উদ্দিন। অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের বিশালাকার এই গরুর দাম হাঁকছেন ১৫ লাখ টাকা। গতবারও হাটে আনা হয়েছিল রাজা বাবুকে। কিন্তু দামে বনিবনা না হওয়ায় অবিক্রীত থেকে যায়।
হেমায়েত প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার একজন রাজা বাবুর দাম ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত বলেছিল। বিক্রি করিনি৷ এখন মনে হচ্ছে, বিক্রি করে দিলেই ভালো হতো। এখন আর কেউ দাম বলছে না। এবার ফেরত নিতে হলে লস হয়ে যাবে।’
আজ শনিবার ঈদের আগের শেষ দিন সকাল থেকেই রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলোতে কেনাবেচা জমে উঠেছে। গাবতলী পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাহারি নামের বিশাল আকারের গরু নিয়ে খামারিরা ক্রেতার অপেক্ষায় আছেন। এসব গরুর প্রায় সবই বিদেশি ও সংকর জাতের।
বিক্রেতারা জানান, বড় গরুর ক্রেতা অপেক্ষাকৃত কম। প্রত্যাশামতো দাম না পাওয়ায় এসব গরু বিক্রি হচ্ছে কম। অনেক বিক্রেতার শঙ্কা, তাঁদের গরু এবার অবিক্রীত থেকে যেতে পারে। আবার কেউ কেউ বলছেন, কিছুটা লোকসানে হলেও গরু বিক্রি করেই ফিরবেন।
কিশোরগঞ্জ থেকে প্রায় ৪০ মণ ওজনের ‘বিগ বস’কে নিয়ে এসেছেন মোরশেদ মিয়া। সংকর জাতের এই গরুর দাম চাইছেন ১৮ লাখ টাকা। মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গরুর সাইজের কারণে নাম রাখসি বিগ বস।’ তাঁর দাবি, এবার গাবতলী হাটের সবচেয়ে বড় গরু বিগ বস। ১৫ লাখের কমে গরুটি বিক্রি করবেন না বলে তিনি জানান। এখন পর্যন্ত ১০ লাখ টাকা দাম উঠেছে বিগ বসের।
গাবতলী হাটের প্রবেশমুখেই বাবুকে নিয়ে বসে আছেন তালেব মিয়া। সংকর জাতের এই গরু চার বছর ধরে পালছেন। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে আনা গরুটির দাম হাঁকছেন ৭ লাখ। তালেব মিয়া বলেন, ‘বাবুর মতো যত্ন করেছি, তাই নাম রেখেছি বাবু। সাড়ে ৫ লাখের বেশি দাম না পেলে ছাড়ব না।’
বাবুর দরদাম করছিলেন মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আসা মুরাদ হোসেন ও তাঁর সঙ্গীরা। মুরাদ বলেন, ‘একটা বড় গরু পেলে ভাবছিলাম কিনব। ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত বললাম। বিক্রি করবে না। এখন মনে হচ্ছে দুই লাখ করে দুইটা কিনে নেব।’
রাজবাড়ী থেকে রাজা ও বাদশাহকে নিয়ে এসেছিলেন আবদুল জব্বার মণ্ডল। গতকাল শুক্রবার বাদশাহকে বিক্রি করেছেন ৩ লাখ ৫ হাজার টাকায়৷ রাজার দাম চাইছেন ৪ লাখ টাকা। আবদুল জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার বড় গরুর ক্রেতা কম। বিক্রি না হলে ফেরত নিয়ে যাব। রাজার মাত্র চার দাঁত হইসে, আরও বড় হবে এটা।’
এবারের হাটে গোপালগঞ্জ থেকে এসেছে ডিজে, নোয়াখালী থেকে এসেছে ডন। ডিজের দাম ৬ লাখ, ডনের দাম ৭ লাখ। নাটোর থেকে আসা ধলা বাহাদুরের দাম ৮ লাখ। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থেকে আনা হীরার দাম চাওয়া হচ্ছে ৭ লাখ।
টাঙ্গাইলে নিজের বাড়িতে মানিককে লালন-পালন করেছেন হামিদা আকতার। দাম চেয়েছেন ৭ লাখ টাকা। হামিদা বলেন, ‘গতবারও মানিককে নিয়ে এসেছিলাম। দাম পাইনি। এবার কেউ কেউ দাম বলছেন। কিন্তু প্রত্যাশামতো হচ্ছে না। আজকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখব। ফেরত নিতে চাচ্ছি না।’
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার দেশি গরুর বেচাকেনা বেশি। ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার মধ্যে দেশি জাতের মাঝারি গরু বিক্রি বেশি।