বিভিন্ন পেশার আড়ালে ছিনতাই, চাঁদাবাজি করে কবির বাহিনীর সদস্যরা

গ্রেপ্তার কবির বাহিনীর সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনের আগে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে তাঁদের হাজির করা হয়
ছবি: সংগৃহীত

কিশোর বয়সে পরিবারের সঙ্গে বরগুনা থেকে ঢাকায় এসে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন কবির হোসেন। পরে গাড়ি চালনা, হাউজিং কোম্পানিতে চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত হন তিনি। একসময় সন্ত্রাসী বাহিনী গাঙচিলে যোগ দেন তিনি। পাঁচ বছর আগে নিজেই একটি বাহিনী তৈরি করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর বাহিনীর সদস্যরা গাড়ি চালনা, দিনমজুরসহ বিভিন্ন পেশার আড়ালে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন স্থানে গত বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে কবির এবং তাঁর সাত সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শুক্রবার এ নিয়ে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব। সেখানেই এসব তথ্য জানানো হয়।

গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন মো. রুবেল ওরফে পানি রুবেল, আমির হোসেন, মো. মামুন, রিয়াজ, মেহেদী হাসান, মামুন ওরফে পেটকাটা মামুন ও বিল্লাল। তাঁদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, চারটি গুলি, দেশীয় অস্ত্র এবং ৪১৭টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। তাঁদের নামে একাধিক মামলা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, কয়েকজন ভুক্তভোগী ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ দেয়। এ নিয়ে অনুসন্ধানে নেমে এই চক্রের প্রধানসহ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা বলেছে, এই দলের প্রধান কবির। সদস্য ২০–২২ জন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে হত্যা, সন্ত্রাস, মাদক কেনাবেচা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করছে।

এই চক্রের প্রধান কবির সম্পর্কে খন্দকার আল মঈন বলেন, ১৯৯০ সালে ঢাকায় এসে কবির বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হন। ২০১০ সালে গাঙচিল সন্ত্রাসী বাহিনীতে যোগ দেন তিনি। এই বাহিনীর সঙ্গে মিলে তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীতে মালবাহী নৌকা এবং ট্রলারে চাঁদাবাজি শুরু করেন। র‌্যাবের অভিযানে গাঙচিল বাহিনীর অস্তিত্ব সংকটে পড়লে ২০১৬ সাল থেকে কবির বাহিনী গড়ে তোলে। তিনি অর্থের বিনিময়ে জমি দখলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। কবিরের বিরুদ্ধে হত্যা, গণধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধে ২৪টি মামলা রয়েছে। তিনি ২০১৮ সালে প্রথম গ্রেপ্তার হন।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন
ছবি: সংগৃহীত

র‌্যাব জানায়, এই দলের সদস্যরা টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বানিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চেয়েছেন। তাঁরা টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে হিসেবে কাজ করতেন। কবির তাঁর দলে এমন ছেলেদের ভেড়াতেন, যাঁদের এলাকায় প্রভাব আছে। এই দলের সবাই জন্মসূত্রে মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা। মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, বসিলা, চাঁদ উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ত তারা।

কবিরের রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না, জানতে চাইলে খন্দকার আল মঈন বলেন, তিনি মূলত মোহাম্মদপুর এলাকায় ভাড়ায় কাজ করেন। কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করার তথ্য পাওয়া যায়নি।