ব্ল্যাকমেলিংয়ে জড়িত কয়েকজন নারীর খোঁজ পেয়েছে ডিবি

ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা (বাঁয়ে) ও মরিয়ম আক্তার মৌ
ছবি: সংগৃহীত

দুই মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের সঙ্গে কাজ করেন এমন কয়েকজন নারী সদস্যের তালিকা পেয়েছে পুলিশ। অভিযানে জব্দ করা মুঠোফোনের ভিডিও ক্লিপ ও স্থির ছবি দেখে তাঁদের আয়োজিত পার্টিতে অংশ নেওয়া প্রভাবশালী ব্যক্তি, শিল্পপতি- বিত্তবান ব্যবসায়ী ও উচ্চবিত্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়েছে।

মামলা তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) বলেছে, লেটনাইট পার্টিতে ভিডিও ক্লিপ ও স্থির ছবি তুলে তারপর ব্ল্যাকমেলিংয়ে অংশ নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। টাকা না দিলে এসব ভিডিও ক্লিপ ও স্থির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাতেন।

গত রোববার রাতে বারিধারার ভাড়া বাসা থেকে পিয়াসা এবং মোহাম্মদপুরের ভাড়া বাসা থেকে মৌকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুটি অভিযানেই পুলিশ দাবি করেছে, তাঁদের কাছ থেকে মদ-মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এই দুজনের বিরুদ্ধে গুলশান ও মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ওই মামলায় পিয়াসা ও মৌকে গত সোমবার তিন দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁদের তিন দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে। আজ শুক্রবার মডেল পিয়াসা ও মৌকে আদালতে হাজির করা হবে।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করছেন, মডেল পিয়াসা ও মৌ ব্ল্যাকমেল করা সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ সদস্য ঢাকার বাইরের নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাঁদের মডেল হওয়ার ইচ্ছা ছিল। ছোট কয়েকটি বিজ্ঞাপনে কাজ করার পর নিজেদের মডেল হিসেবে তেমন প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। আবার অনেকে ইউটিউবভিত্তিক কয়েকটি নাটকে অভিনয় করে নিজেদের মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। পরে তাঁরা ব্ল্যাকমেলিংয়ে জড়িয়ে পড়েন।

করোনা পরিস্থিতিতে পাঁচ তারকা হোটেলগুলো বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যেই নিয়মিত পার্টি হতো পিয়াসার ফ্ল্যাটেই। ইয়াবা ও মদ্যপানের সব আয়োজন থাকত সার্বক্ষণিক। তাঁর একাধিক দামি ব্যক্তিগত গাড়ি আছে। তাঁর বাবা শুল্ক বিভাগের একজন কর্মচারী ছিলেন। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামে। বারিধারা আবাসিক এলাকার ৯ নম্বর রোডের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে ভাড়া থাকতেন পিয়াসা। সার্ভিস চার্জ ও সিকিউরিটি বিল বাদে শুধু ফ্ল্যাটভাড়াই দেড় লাখ টাকার মতো। বিশাল ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকেন। তাঁর রান্না করাসহ ব্যক্তিগত কাজের জন্য কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া আছে।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবির আরেক কর্মকর্তা বলেন, রিমান্ডে থাকা মৌ জিজ্ঞাসাবাদে ব্ল্যাকমেল করে বিত্তবানদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার কথা স্বীকার করেছেন। মৌ ক্লাবে পার্টির আয়োজন করতেন। সেখানে পার্টির দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করতেন। পার্টি শেষ হওয়ার কয়েক দিন পর এসব ধারণ করা ভিডিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই নিজের মানসম্মান ও সামাজিক মর্যাদার ভয়ে চক্রটিকে টাকা দিয়ে ভিডিও মুছে (ডিলিট) ফেলাতেন। আর যাঁরা টাকা দিতে রাজি হতেন না, তাঁদের পরিবারের লোকজনের কাছে কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন। একপর্যায়ে তাঁরাও টাকা দিতে বাধ্য হতেন।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, পিয়াসা ও মৌয়ের সঙ্গে অনেক নারী জড়িত। তাঁরা কারা, কারা তাঁদের মদদ দিয়েছে, তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। বিত্তবানেরা পার্টিতে অংশ নিয়ে ব্ল্যাকমেলিংয়ের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, পিয়াসা একটি প্রতিষ্ঠানে ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন। অথচ প্রতি মাসে তাঁর বাসার খরচ ছিল লাখ টাকার ওপরে। তিনি দামি গাড়িতে চলতেন। তাঁর দুটি গাড়ির খোঁজ পাওয়া গেছে।