বর্জ্য, পয়োবর্জ্য, যানজট, নদীদূষণসহ নানা দূষণে ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে। যুক্ত আছে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা। সেই বিবেচনায় আগামী ২০ বছরের মধ্যে বিশ্বের ১০টি মেগাসিটির মধ্যে থাকবে ঢাকাও। পরিবেশ, আবাসন, পরিবহনসহ সার্বিক দিক থেকে ঢাকা শহরকে বাঁচাতে হলে সরকার ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষকেই সচেতন হতে হবে। ভবিষ্যতের মেগাসিটির সমস্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে এখনই।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কাউন্সিল ভবনে মেগাসিটির উন্নয়ন নিয়ে তিন দিনের সেমিনারের শেষ দিনে গতকাল এসব কথা বলেছেন বক্তরা। বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ ছাড়াও বেসরকারি ১০টি সংস্থা ও সংগঠন যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, স্থাপত্য ইনস্টিটিউট, নগর উন্নয়ন সংস্থা, আরবান স্টাডি গ্রুপ, ইউনিয়ন অব আর্কিটেক্ট ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন।
সেমিনারের প্রধান অতিথি গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকা শহরকে বসবাসের যোগ্য করতে হলে রাস্তার ফুটপাত হকারমুক্ত করতে হবে। বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পে এবং বড় বড় ভবনে বাধ্যতামূলকভাবে বর্জ্য শোধনের যন্ত্র বসাতে হবে। তিনি বলেন, হকার মার্কেটগুলোতে অনেক দোকান রয়েছে। কিন্তু হকাররা দোকান পান না। রাজনৈতিক নেতা-কর্মী আর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ১৫-২০টি করে দোকান রয়েছে।
রাজধানীতে উঁচু ভবন নির্মাণ করতে হলে ‘পয়োবর্জ্য শোধনযন্ত্র’ বসাতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এটা ঢাকা ওয়াসারই দেখা উচিত। মন্ত্রী ‘ঢাকা আরবান ক্যাম্পেইন-২০১৬’-এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। তিন দিনের সেমিনারের প্রথম দুই দিনে প্রায় ২০০ সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। দুই দিনে যেসব বিষয় আলোচিত হয়, তার ভিত্তিতে সমাপনী দিনে সুপারিশমালা উপস্থাপন করে আয়োজকদের আটটি দল। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, জনগণকে সম্পৃক্ত করে রাজধানীর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা, ভূমি ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে বিভিন্ন স্তরের মানুষকে এক করা, প্রাকৃতিক অবস্থা যেমন মাটি, পানি, গাছপালা, খেলার মাঠ, হাঁটার জায়গা বজায় রেখে শহরকে স্বাস্থ্যসম্মত রাখা, ভূমির ব্যবহার ও পরিবহন ব্যবস্থাপনাকে আলাদাভাবে চিন্তা না করা, সেবা প্রদানকারী সংস্থা ও নিয়ন্ত্রকদের কাজে জবাবদিহি রাখা, ড্রেনেজ লাইন উন্নত করা, খাল সংরক্ষণ করা, আবর্জনায় বন্দী কালভার্টগুলো খুলে দেওয়া ইত্যাদি। সুপারিশ করা হয় রাজধানীর ওপর চাপ কমিয়ে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার উন্নয়নের। সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সেন্টার ফর আরবান স্টাডির চেয়ারম্যান ও নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম সরকারের গৃহীত আবাসন, পরিবহনসহ রাজধানীকেন্দ্রিক প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সেমিনারের সুপারিশমালার সামঞ্জস্য রাখার ব্যাপারে তাগিদ দেন। তিনি বলেন, ‘সবার জন্য গৃহায়ণ বা আবাসন সরকারও চায়, আমরাও চাই। তবে ধনীরা যেহেতু নিজেরাই আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারে, তাই সরকারের উচিত গরিবদের আবাসনের ব্যবস্থা করা।’ সভাপতির বক্তব্যে বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক খালেদা ইকরাম জনসংখ্যা কমানোর জন্য এখন থেকে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, চাইলেই মেগাসিটি ছড়িয়ে দেওয়া যাবে না, যদি ভূমি ব্যবস্থাপনা সঠিক না থাকে।
সেমিনারে সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন বুয়েটের শিক্ষক জাকিউল ইসলাম, ইশরাত ইসলাম, ফরিদা নীলুফার, স্থপতি ইকবাল হাবিব, মুসলেহ উদ্দিন, নাইমা খান, নাসরীন হোসেন, নাজমুন নাহার, সামিয়া শারমীন ও অমৃতা কর।