মনোরঞ্জন ও মহুয়া হাজংয়ের ঘটনা ‘সীমাহীন অবিচারের’ নমুনা

গাড়ির ধাক্কায় পা হারানো মনোরঞ্জন হাজংয়ের ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’। শাহবাগ, ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বরছবি: দীপু মালাকার

রাজধানীতে গাড়ির ধাক্কায় মনোরঞ্জন হাজংয়ের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় মামলা করতে গিয়ে তাঁর মেয়ে মহুয়া হাজং যে হয়রানির শিকার হয়েছেন, তার কঠোর সমালোচনা হয়েছে এক সমাবেশে। রাজধানীর শাহবাগে আজ রোববার এই সমাবেশ হয়। সেখানে বক্তারা বলেন, মনোরঞ্জন ও মহুয়া হাজংয়ের এই ঘটনা ‘সীমাহীন অবিচারের’ একটি বড় নমুনা।

মনোরঞ্জন হাজংয়ের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবিতে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, বাংলাদেশ সব মানুষের হয়নি। তার প্রমাণ হচ্ছে ১৭ দিন আগের ভয়ংকর ঘটনাটি। সার্জেন্ট মহুয়া হাজং একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে রাষ্ট্রের সেবা করছেন। তাঁর বাবা মনোরঞ্জন হাজং বিজিবির সদস্য হিসেবে সীমান্ত রক্ষা করে রাষ্ট্রের সেবা করেছেন। এমন একটি ঘটনার শিকার হলেও তাঁদের মামলা কেউ নিচ্ছে না।

রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা কোথায় আছি? এ রকম সীমাহীন অবিচার বাংলাদেশে দেখতে হবে? তাঁরা প্রান্তিক হাজং জনগোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার জন্য কি এই অবস্থা, নাকি একজন বিচারপতি রাষ্ট্রক্ষমতার ওপরের ভাগে থাকেন বলে এই অবস্থা? এই কাঠামোগত বৈষম্যের মধ্য দিয়ে প্রান্তিক মানুষের বিচারের জায়গাটি বন্ধ করা হচ্ছে।’

হাসপাতালের শয্যায় দুর্ঘটনায় পা হারানো মনোরঞ্জন হাজং, তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তার বাবা
ছবি: সংগৃহীত

মানবাধিকারকর্মী আকরামুল হক বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রে ক্ষমতাকাঠামোর বাইরে থাকা সাধারণ মানুষ বিচার পাচ্ছে না। ন্যায়ানুগ আচরণ না করলে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে জনক্ষোভ তৈরি হবে।

মনোরঞ্জন হাজংয়ের ঘটনাটিকে ‘হত্যা প্রচেষ্টা’ বলে আখ্যায়িত করেন যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম। তিনি বলেন, এই হত্যাচেষ্টার বিচার করে বিচারব্যবস্থাকে মানুষের আস্থার জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বাংলাদেশে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। এটি আমাদের জন্য দুঃখ ও লজ্জার। বিচার পেতে হলে জনগণকে জাগতে হবে।

প্রকাশক রবিন আহসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার বিভাগের সদস্য দীপায়ন খীসা বক্তব্য দেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট ফোরাম কর্মসূচিতে সংহতি জানায়।

২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের চেয়ারম্যানবাড়ী এলাকায় ইউটার্নে একটি দ্রুতগতির বিএমডব্লিউ গাড়ির ধাক্কায় আহত হন মনোরঞ্জন হাজং। পরে তাঁকে প্রথমে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে তাঁর ডান পা বাদ দেওয়া হয়। এরপর তাঁকে বারডেম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

মনোরঞ্জন হাজং এখন রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাবার এ দুর্ঘটনার জন্য সার্জেন্ট মহুয়া থানায় মামলা করতে গেলে তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে দুই সপ্তাহ পর ১৬ ডিসেম্বর মামলা নিতে বাধ্য হয় বনানী থানা-পুলিশ। মামলায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করা হয়। তবে এর দুই দিন আগেই গুরুতর আহত মনোরঞ্জন হাজংকে দায়ী করে অভিযুক্ত গাড়িচালক সাঈদ হাসান থানায় একটি জিডি করেন।