মাকে খুন হতে দেখার পর অস্বাভাবিক আচরণ করছে ছোট্ট মায়মুনা

প্রতীকী ছবি

চার বছরের ছোট্ট শিশু মায়মুনা জাহান কখনো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, কখনো আবার সামনে যাকে পাচ্ছে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে, মারধর করছে। মা মা বলে চিৎকার করছে, ১০ মাস বয়সী ছোট ভাইকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ছে। দুদিন ধরেই শিশুটি এমন অস্বাভাবিক আচরণ করছে।

গত শনিবার বিকেলে রাজধানীর সবুজবাগের দক্ষিণগাঁও এলাকার একটি বাসায় শিশু মায়মুনার সামনেই তার মা তানিয়া আফরোজকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এর আগে শিশুটির মুখে স্কচটেপ দিয়ে হাত-পা বেঁধে রাখা হয়। তার ১০ মাস বয়সী ছোট ভাই তানভীরুলকেও একইভাবে স্কচটেপ দিয়ে মুখ আটকে দেয় দুর্বৃত্তরা। তার পর থেকেই শিশুটি অস্বাভাবিক আচরণ করছে বলে জানিয়েছেন শিশুটির বাবা ময়নুল ইসলাম। তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইলেকট্রো মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। চাকরিসূত্রে তিনি সেখানেই থাকেন।

আরও পড়ুন

ময়নুল ইসলাম বলেন, দুই সন্তানের সামনেই তাঁর স্ত্রীকে খুন করা হয়েছে। সন্তানদের মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে রাখা হয়েছিল। ঘটনার পর দুজনেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর মায়মুনা দুদিন সবুজবাগে তাঁর এক বন্ধুর বাসায় ছিল। আর তানভীর হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তাকে বালিশচাপা দেওয়ায় শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছিল। সোমবার দুপুরে তানভীরকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়। দুপুরেই মায়মুনা ও তানভীরকে নিয়ে রংপুরে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ময়নুলের বড় ভাই মাসুদ রানা ও মা জ্যোৎস্না বেগম।

ময়নুল জানান, তিনি এখন গ্রামের বাড়ি রংপুরে আছেন। ঘটনার পর স্ত্রীর লাশের ময়নাতদন্ত এবং দাফন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সন্তানদের সময় দিতে পারেননি। তাই বড় ভাই ও মা তাদের (দুই শিশু সন্তান) গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসছেন। ঘটনার সময় ময়নুল ছিলেন কর্মস্থল ফরিদপুরে। তিনি খবর পেয়ে ঢাকায় ছুটে আসেন। তখন মায়মুনা একেবারে চুপ হয়ে যায়। কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছিল না। শুধু অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকিয়ে থাকত। তবে এখন অস্বাভাবিক আচরণ করলেও মাঝেমধ্যে কথা বলছে।

এদিকে তানিয়া আফরোজ হত্যার দুদিন পরও হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত করছে সবুজবাগ থানা-পুলিশ। বাসা থেকে সোনার গয়না ও মুঠোফোন লুট করতে গৃহবধূ তানিয়া আফরোজকে হত্যা করা হয়েছে বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। মামলার এজাহারে মুগদা এলাকার একটি ইলেকট্রনিক সার্ভিসিং সেন্টারের কর্মী বাপ্পীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি দু-তিন সহযোগী নিয়ে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) মেরামত করার কথা বলে তানিয়ার বাসায় ঢোকেন। বাসার আলমারি থেকে সোনার গয়না লুট করার সময় বাধা পেয়ে তাঁরা তানিয়াকে খুন করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পুলিশের সবুজবাগ জোনের সহকারী কমিশনার মনতোষ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত হত্যার ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।