মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বিচার দাবি

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা আন্তর্জাতিকভাবে ভুলে যাওয়া একটি গণহত্যায় পরিণত হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা সংঘটিত এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করে নিতে হবে। এ জন্য সরকারকে কূটনৈতিক পর্যায়ে সক্রিয় হতে হবে। এ গণহত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে হোসেন চৌধুরী হলে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম–মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, যুদ্ধের একটি সীমা রয়েছে। যুদ্ধে কোনোভাবেই সাধারণ মানুষকে টার্গেট করা যাবে না। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান টার্গেট ছিল এ দেশের সাধারণ মানুষ। তারা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে গণহত্যা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
বক্তারা বলেন, গণহত্যায় জড়িত যুদ্ধাপরাধীদের লেখা বিভিন্ন বইয়ে তাঁরা বিষয়টি স্বীকার করেছেন, যা দালিলিকভাবে প্রমাণিত, দেশে গণহত্যা চালানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই স্বীকৃতি আদায় করে নিতে হবে। জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদানে মামলা করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

সেমিনারে সংগঠনের সহসভাপতি ম হামিদ ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক কামালউদ্দীনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সংগঠনের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব, যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এডিশনাল আইজিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মামুদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম, কেন্দ্রীয় নারী কমিটির সভানেত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়লা হাসান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্র নির্মাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল প্রমুখ।

‘বাঙালি গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি জাতিসংঘের ব্যর্থতা’ শীর্ষক এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধসংক্রান্ত আইনের মধ্যে পড়ে। গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রবাসী, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও উদ্যোগ নিতে হবে।

সেমিনারে সাবেক এডিশনাল আইজিপি আবদুল মামুদ বলেন, স্বীকৃতির সঙ্গে গণহত্যায় যুক্ত ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিকভাবে বিচারের উদ্যোগ নিতে হবে।

অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা আন্তর্জাতিকভাবে ভুলে যাওয়ার একটি গণহত্যায় পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশেও এটি ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমাদের সমন্বিত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করে নিতে হবে।’
হারুন হাবীব বলেন, ‘সরকারকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করার জন্য দাপ্তরিকভাবে আবেদন করে কূটনৈতিক পর্যায়ে সক্রিয় হতে হবে। যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দিয়েছিল, তাদের আবার এই বিষয়ে সমর্থন আদায় করে নিতে হবে।’

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘এটি শুধু কোনো রাজনীতি বা সরকারের বিষয় নয়। স্বীকৃতি না দেওয়ার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। ভূরাজনৈতিক বিষয় রয়েছে। যুক্ত আছে পশ্চিমা ও কিছু ইসলামিক রাষ্ট্র। স্বীকৃতি আদায় করে নিতে আমাদের সক্রিয় আন্দোলন করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে ম হামিদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পরে আমাদের একটি রাষ্ট্রীয় ঘাটতি ছিল। গণহত্যায় যাঁরা যুক্ত ছিলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে তাঁদের সখ্য ছিল। জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে আবেদন করতে হবে। সরকার যেন তাদের দায়িত্ব পালন করে, এ জন্য আমাদের পক্ষ থেকে চাপ দিয়ে উদ্যোগী হতে বাধ্য করতে হবে।’