মেয়রের চিঠির জবাবই দেয়নি ২২টি সংস্থা

উন্নয়নকাজের পরিকল্পনা জানাতে ২৬টি সংস্থাকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ে জবাব দিয়েছে মাত্র ৪টি সংস্থা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন

সড়ক খোঁড়াখুঁড়িসহ যেকোনো উন্নয়নকাজ শুরুর আগে জানাতে হবে—এমন একটি চিঠি ২৬টি সংস্থাকে দিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের পক্ষে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সই করা চিঠিটি পাঠানো হয় গত ৭ অক্টোবর। চিঠির উত্তর দিতে অনুরোধ জানিয়ে ২৫ দিন সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।

কিন্তু নির্ধারিত সময়ের (৩১ অক্টোবর) মধ্যে মাত্র চারটি সরকারি সংস্থা চিঠি দিয়ে তাদের পরিকল্পনার কথা মেয়রকে জানিয়েছে। বাকিরা চিঠির জবাব এখনো দেয়নি।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জলাশয় ভরাট করে আবাসিক ভবনের অনুমতি প্রদান করায় দুর্যোগপ্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, খাল বেদখল হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, সুপেয় পানি, সুষ্ঠু পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন সংস্থা রাস্তা কাটার কারণে সর্বসাধারণ ও যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মতামত নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে ঢাকা শহর পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প এবং আগামী দিনে কী উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হবে, তার বিবরণ পাঠাতে অনুরোধ করা হয়।

ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা জানিয়ে চিঠির জবাব দিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলো হলো ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি (বিটিসিএল), ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ঢাকা ওয়াসা)। এ ছাড়া ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড তাদের উন্নয়ন প্রকল্পের কথা অবহিত করেছে ডিএসসিসিকে।

চিঠি পাঠানোর পরও ২২ সংস্থার সাড়া না দেওয়ার বিষয়ে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস প্রথম আলোকে বলেন, যারা ডিএসসিসির উদ্যোগে সাড়া দিয়েছে, তাদের ধন্যবাদ। আর যারা সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য আগামী বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, একই জায়গায় একাধিক সংস্থা পৃথকভাবে কাজ করায় জনগণের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। কিন্তু সেটা যদি সমন্বয়ের মাধ্যমে করা যেত, তাহলে একই সড়কে বারবার কাজ করার প্রয়োজন পড়ত না। এতে জনদুর্ভোগ লাঘব হওয়ার পাশাপাশি উন্নয়নও টেকসই হতো। আগে না জানালে এখন থেকে কোনো সংস্থাকে ইচ্ছেমতো কাজ করতে দেওয়া হবে না।

যারা ডিএসসিসির উদ্যোগে সাড়া দিয়েছে, তাদের ধন্যবাদ। আর যারা সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য আগামী বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ফজলে নূর তাপস, মেয়র

যে ২২টি সংস্থা চিঠির জাবাব দেয়নি, তার মধ্যে রয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর, স্থাপত্য অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, বিআরটিএ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, তিতাস গ্যাস, হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক, মগবাজার–মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের পরিচালক, পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ।

তবে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. আল মামুন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তাঁদের পরিকল্পনার বিবরণ পাঠানো হয়েছে। যদিও ডিএসসিসির মুখপাত্র মো. আবু নাছের প্রথম আলোকে বলেন, তিতাসের পক্ষ থেকে তারা কোনো পরিকল্পনা পাননি।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী কাজী শাহরিয়ার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি। আর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, চিঠির জবাব তাঁরা দেবেন।

সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন সংস্থার কাজে শৃঙ্খলা আনতে নগর–পরিকল্পনাবিদদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন মেয়র তাপস। সেখানে পরিকল্পনাবিদেরা তাঁকে সেবা সংস্থার কাজে সমন্বয় আনতে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন।

নগর–পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, উন্নত দেশে সিটি করপোরেশন বা নগর সরকারের অধীনে সব সেবা সংস্থা কাজ করে। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনে নগরে সব ধরনের উন্নয়নকাজের তদারকি ও সমন্বয়ের দায়িত্ব করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছে। নগর কর্তৃপক্ষের অধীনে বিভিন্ন সেবা সংস্থার সমন্বয় না হলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সফলতা পাওয়া যায় না। দক্ষিণের মেয়রের এ উদ্যোগ নগর–পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনাকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে পারে বলে মনে করেন এই নগর–পরিকল্পনাবিদ।