যেভাবে কাজ করবে ইভিএম

আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে। রাজধানীর নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি উয়িং খোলা হয়েছে, যেখানে ইভিএম কীভাবে ব্যবহার করা হবে, তা দেখানো হচ্ছে।

ইভিএম কীভাবে ব্যবহার করা হয়, রোববার তা দেখতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর মমিনুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ইভিএমের মূলত তিনটি অংশ। ডেটা যাচাই করার যন্ত্র বা কন্ট্রোল ইউনিট, ব্যালট যন্ত্র এবং মনিটর। ডেটা যাচাই যন্ত্রটি কাজ শুরু করবে দুটি অ্যাকসেস কার্ডের মাধ্যমে। এর একটি থাকবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে, অন্যটি সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে একটি পিন নম্বর থাকবে, তা ব্যবহারের মাধ্যমে ভোটারের সংরক্ষিত তথ্য জানা যাবে। মেশিনটির একটি অংশে ভোটারের আঙুলের ছাপ দেওয়ার জায়গা আছে। সেখানে আঙুলের ছাপ দেওয়া হলে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত হবে।

মমিনুল ইসলাম আরও বলেন, আঙুল ছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এন্ট্রি দিয়ে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে। ভোটার পরিচয় নিশ্চিত হলে তা মনিটরে দেখা যাবে। মনিটরটি ভোটকক্ষের এমন স্থানে স্থাপন করা হবে, যেখান থেকে ভোটারের পরিচয় সম্পর্কে রিটার্নিং কর্মকর্তা, দুই দলের পোলিং এজেন্ট ও ভোটার নিজে দেখতে পারবেন।

ভোটার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলে ভোটারকে ভোট দেওয়ার গোপন কক্ষে পাঠানো হবে। সেখানে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরকে ভোট দেওয়ার জন্য তিনটি আলাদা ব্যালট যন্ত্র থাকবে। মমিনুল বলেন, ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলে ব্যালট যন্ত্রের মনিটর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করবে। তখন বিভিন্ন প্রার্থীর নাম এবং প্রতীক দেখা যাবে। অন্য সময় এই যন্ত্র নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকবে।

ব্যালট যন্ত্রে প্রত্যেক প্রার্থীর নাম ও প্রতীকের পাশে আলাদা সাদা বোতাম থাকবে। বোতামে চাপ দিলে যন্ত্র থেকে স্বয়ংক্রিয় বার্তায় বলা হবে, ‘আপনার পছন্দের প্রতীক নিশ্চিত হলে সবুজ বাটন চাপুন’। এরপর নিচে থাকা সবুজ বোতাম চেপে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

‘কোনো ভোটার যদি ভুলে অন্য প্রতীকের পাশের বোতামে চাপ দিয়ে ফেলেন, তাহলে সবুজ বোতাম না চেপে তৎক্ষণাৎ সঠিক বোতাম চাপতে পারবেন। এভাবে নিশ্চিত হওয়ার আগে দুবার বদলানোর সুযোগ পাওয়া যাবে। তবে তৃতীয়বার যে প্রতীকের পাশের বোতাম চাপা হবে, ভোট সেই প্রার্থীকে দেওয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে,’ বলেন মমিনুল।

ভোটার যখন ভোট দিতে কক্ষে ভেতরে থাকবেন, তখন বাইরের মনিটরে লেখা থাকবে, ‘ভোট গ্রহণ চলছে’। ভোট দেওয়া সম্পন্ন হলে বাইরের মনিটরে, মোট ভোটারের সংখ্যা এবং যতজন ভোট দিয়েছেন, তাঁদের সংখ্যা দেখা যাবে। ফলে এর বাইরে কোনো ভোট এলে পোলিং এজেন্ট সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারবেন।

একই ভোটার যদি আবার ভোট দিতে আসেন, তবে যন্ত্র জানাবে যে তাঁর ভোটটি ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে এবং জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টায় ভোটারকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হবে।

ইভিএম সম্পর্কে উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ইভিএম ব্যবহারে প্রার্থী ও ভোটার দুপক্ষই লাভবান হবে। ভোটার কম সময়ে ভোট দিতে পারবেন। তিনি বলেন, অনেক সময় ব্যালট পেপারে সঠিক জায়গায় সিল পড়ে না, কখনো ভাঁজ করার ফলে সিলের দাগ অন্যদিকে পড়ে ব্যালট বাতিল হয়, ইভিএম ব্যবহারের ফলে এই সমস্যা আর থাকছে না।

নির্বাচন কমিশনের তৃতীয় তলায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় এবং মতিঝিলে সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে ইভিএম কীভাবে ব্যবহার করা হবে তা দেখানো হচ্ছে। এদিকে ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রগুলোয় মক (প্রতীকী) ভোট গ্রহণ করা হবে, যাতে ভোটাররা ইভিএমে ভোট গ্রহণের বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পান।