রাজধানীর ১৬ স্থানে দৈনিক চুরি শতাধিক মুঠোফোন

ছিনতাই
প্রতীকী ছবি

ঢাকার ১৬টি স্থান থেকে প্রতিদিন শতাধিক মুঠোফোন চুরির ঘটনা ঘটছে। শুধু রাজধানীতে মাসে কোটি টাকার মুঠোফোন ছিনতাই করছেন চক্রের সদস্যরা। ছিনতাইয়ের পর মুঠোফোনের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি করা হচ্ছে।

সম্প্রতি চুরি–ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গত মার্চ মাসে মুঠোফোন ছিনতাইকারী চক্রের অন্তত ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে শতাধিক মুঠোফোন। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

ডিবি বলছে, পুরো রাজধানীকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে ছিনতাই করেন চক্রের সদস্যরা। ঢাকায় অন্তত ২০টি মুঠোফোন ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে, যারা দিনে পাঁচ থেকে সাতটি মুঠোফোন ছিনতাই করে। ছিনতাই হওয়া কম দামি মুঠোফোনগুলো সরাসরি গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটে বিক্রি করা হয়। আর ভালো কোম্পানির দামি মুঠোফোনগুলো কিনে নেন তিনজন ব্যক্তি। তাঁদের দুজনের নাম টিপু ও শহিদ। এ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আরেকজনের নাম–পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

গাবতলী, মিরপুর, শ্যামলী, আদাবর, মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি এলাকায় মুঠোফোন ছিনতাই করে চারটি চক্র। এ চক্রগুলোর সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন শহিদ। আর এ চক্রের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের মুঠোফোন কিনে বিক্রি করেন টিপু।

ডিবির একটি সূত্র বলছে, ছিনতাই করেই ওই মুঠোফোনের একটি ছবি টিপুর কাছে পাঠান ছিনতাইকারী। টিপু সাভারে থাকেন। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় তিনি ঢাকায় আসেন। মুঠোফোন কিনে আবার সাভারে ফিরে যান। সেখানে দুটি মোবাইল সেট সার্ভিসিংয়ের দোকানে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকায় আইএমইআই পরিবর্তন করে কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে বিক্রি করা হয় মুঠোফোন। ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মুঠোফোন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় কিনে নেন টিপু। পরে সেগুলো ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।

মার্চে মুঠোফোন ছিনতাইকারী চক্রের অন্তত ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চোরাই মুঠোফোন কেনাবেচায় জড়িত দুজনও গ্রেপ্তার। অন্তত ২০টি ছিনতাইকারী চক্র দিনে পাঁচ থেকে সাতটি করে মুঠোফোন ছিনতাই করে।

মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় গত মাসে বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে দুটি চক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উত্তরা, আবদুল্লাহপুর, বনানী, গুলশান, ভাটারা এলাকায় সক্রিয় রয়েছে তিনটি ছিনতাইকারী চক্র। হাতিরলঝিল, রামপুরা, মগবাজার ও মালিবাগ এলাকায় তিন থেকে চারটি চক্র রয়েছে। শাহবাগ, মৎস্য ভবন ও নিউমার্কেট এলাকায় সক্রিয় রয়েছে অন্তত পাঁচটি চক্র। গুলিস্তান, কমলাপুর, যাত্রাবাড়ী, বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় আরও চার থেকে পাঁচটি চক্র মুঠোফোন ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ডিবির তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার হাসান মুহাম্মদ মুহতারিম বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে খোকন নামের এক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জানতে পারেন, তাঁর জামিন হয়েছে। গত মার্চ মাসে আবার ছিনতাই করতে গিয়ে মোহাম্মদপুর থানা–পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন খোকন।

যাচাই–বাছাই না করে অল্প দামে ছিনতাইয়ের মুঠোফোন কিনে বিপদে পড়ছেন অনেকেই। একটি ফেসবুক গ্রুপে বিজ্ঞাপন দেখে ১ লাখ টাকার বেশি দামের একটি আইফোন মাত্র ৪০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলেন এক যুবক। ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে মুঠোফোনটি ছিনতাই হয়েছিল। এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছিল ডিবির একটি দল। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মুঠোফোনটি শনাক্ত করা হয়। পরে ওই যুবককে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ডিবির ওই কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মুঠোফোন কেনার সময় বিক্রেতা একটি নম্বর থেকে ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। পরে ওই নম্বরের সূত্র ধরে ছিনতাইকারী চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সহকারী কমিশনার হাসান মুহাম্মদ মুহতারিম বলেন, রাজধানীতে সক্রিয় মুঠোফোন ছিনতাইকারী চক্রগুলোকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে ধারাবাহিক অভিযান চলবে।