রোজিনা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে

রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশের তৃতীয় দিন আজ শুক্রবারছবি: প্রথম আলো

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কারাবন্দী রোজিনা ইসলাম মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক উল্লেখ করে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, রোজিনা মুক্ত না হলে মুক্ত সাংবাদিকতার অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে পড়বে। ব্যক্তিগত তথ্য, ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করে সাংবাদিকদের ঐক্যে যাতে বিভেদ সৃষ্টি করা না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতেও বলেছেন তাঁরা।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশের তৃতীয় দিন আজ শুক্রবার এসব কথা বলেন সাংবাদিক নেতারা। বেলা সাড়ে ১১টায় আয়োজিত ওই সমাবেশে তাঁরা আরও বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রোজিনা কলম ধরেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা সবাই জানতে চায়। দুর্নীতিবাজদের গুন্ডামিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বন্ধ হবে তা মানা যায় না। রোজিনার জামিন এবং মামলা প্রত্যাহারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তাঁরা। রোজিনার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা তদন্ত কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন তাঁরা।

১৭ মে সচিবালয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখে হেনস্তা করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। রাতে তাঁকে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। রোজিনা এখন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে বন্দী রয়েছেন।

রোজিনা ইসলাম
ছবি: কোলাজ

প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউর সহসভাপতি ওসমান গণি বাবুল। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এম এম জসিম।

ডিআরইউ আলাদা তদন্ত করবে

ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান বলেন, বিভিন্ন ব্যানারে সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে বিক্ষিপ্ত ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। যে ফোনালাপ ফাঁস করা হয়েছে তাতে এমন কোনো তথ্য নেই। আগামী রোববার রোজিনা জামিন পেলেও ডিআরইউ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। প্রকৃত রহস্য জনসম্মুখে প্রকাশে ডিআরইউ আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করবে। যে কর্মকর্তারা রোজিনার ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পরিবার মামলা না করলে ডিআরইউ করবে।

সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যদি সাংবাদিক সংগঠনগুলোর মধ্যে রোজিনাকে নিয়ে বিভক্তি তৈরি হয়, তাহলে ডিআরইউ আলাদা আন্দোলন করবে, ডিআরইউ যৌক্তিক সমাধান চায়। তিনি আরও বলেন, ‘আমলারা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। মন্ত্রী, পাতি ও সিকি মন্ত্রীরা কেন তাঁদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সাংবাদিকদের জন্য তাঁদের কোনো দায়িত্ব নেই। রোজিনা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরছি না।’

রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশের তৃতীয় দিন আজ শুক্রবার
ছবি: প্রথম আলো

জব্দের তালিকায় রাষ্ট্রীয় গোপনীয় তথ্য নেই

সহসভাপতি ওসমান গণি বাবুল বলেন, সাংবাদিককে ‘চোর’ উপাধি দিয়ে হেনস্তা করবেন তা সাংবাদিকেরা মেনে নেবে না। আসামির (রোজিনা ইসলাম) কাছ থেকে কোনো নথি জব্দ করেনি পুলিশ, করেছে বাদীপক্ষ অতিরিক্ত সচিবের কাছ থেকে। জব্দের তালিকা থেকে দেখা গেছে, রাষ্ট্রীয় গোপনীয় কোনো তথ্য নেই।

মন্ত্রীদের বক্তব্য নিয়ে সবাই সন্দিহান

কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদ বলেন, যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের নিয়ে তদন্ত কমিটি করে সাংবাদিকদের সঙ্গে উপহাস করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের বক্তব্য নিয়ে এখন সবাই সন্দিহান। জামিনযোগ্য ধারায় মামলা হলেও এত দীর্ঘ সময় কেন জেলে থাকতে হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, রোজিনাকে আটকে রাখার পর সাংবাদিকেরা একাধিকবার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন, কিন্তু তাঁরা কোনো কথা বলেননি। সরকারের উচ্চ মহলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছেন তাঁরা।

পরিকল্পিত ও সাজানো ঘটনায় রোজিনা আটক

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জামিনে মুক্ত ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, পরিকল্পিত ও সাজানো ঘটনায় সাংবাদিক রোজিনাকে আটক করা হয়েছে। সাংবাদিকদের এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই চালাতে হবে। এটা এখন সাংবাদিকদের অস্তিত্বের প্রশ্ন।

প্রতিবাদ সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, ডিআরইউর সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, ডিআরইউ বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, ডিআরইউর সদস্য হেলেমুল আলম বিপ্লব, জামিউল আহসান শিপু, শাহনাজ শারমিন, রিয়াদুল করিম, আহমেদ ফয়েজ, আশীষ কুমার দে, শিপন হাবিব, রাব্বি সিদ্দিকী, মানিকলাল ঘোষ, সাইফুল ইসলাম জুয়েল, এস এম ফয়েজ, রফিক রাফি, মতলু মল্লিকসহ অনেকে।