রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন চালানোর ঘোষণা

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংবাদিক নেতা-কর্মীদের মানববন্ধন। তোপখানা রোড, সেগুনবাগিচা, ঢাকা, ১৮ মে
ছবি: আশরাফুল আলম

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ। তাঁর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাব এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সামনে পৃথক মানববন্ধনে তাঁরা এ কর্মসূচির কথা জানান।

জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণের কর্মসূচিতে সাংবাদিকেরা বলেন, তথ্য অনুসন্ধানের জন্য গিয়ে একজন সাংবাদিককে কেন জেলে যেতে হবে? কারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়, গণমাধ্যমকে সরকারের প্রতিপক্ষ সাজাতে চায়, তা-ও খুঁজে বের করতে হবে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সহসভাপতি এম এ কুদ্দুস বলেন, ‘রোজিনার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। তিনি ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা করি।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম বলেন, ‘রোজিনা ইসলামকে মন্ত্রণালয়ে আটকে রেখে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এর নিন্দা জানাই। দায়ীদের বিচার চাই।’ জামিনে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে মানববন্ধনের শুরুতেই সাংবাদিকেরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

সাংবাদিকেরা বলেন, প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে ‘সন্ত্রাসী বা পাড়ার মাস্তানদের স্টাইলে’ রোজিনা ইসলামকে শারীরিক ও মানসিকভাবে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তার ভিডিও পৃথিবী দেখেছে। রোজিনা ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের জন্য সাংবাদিকেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

ডিআরইউর সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, ডিআরইউর প্রায় দুই হাজার সদস্য রোজিনা ইসলামের পাশে আছেন। তিনি রোজিনা ইসলামের হত্যাচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হবে বলে উল্লেখ করেন। তাঁর রিমান্ড চাওয়ার ঘটনাকে ন্যক্কারজনক বলে উল্লেখ করেন।

ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান রোজিনা ইসলামকে যে আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই আইন বাতিলের দাবি জানান।

সাংবাদিক নেতা পুলক ঘটক বলেন, রোজিনা ইসলামের ঘটনায় সংশ্লিষ্টরা প্রমাণ করতে চেয়েছেন, তাঁরা যা খুশি তাই করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, এটা গণতন্ত্র নয়। এতে গণতন্ত্র ব্যাহত হয়।

নাদিয়া শারমিন বলেন, সচিবালয়ের ভেতরে রোজিনা ইসলামের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, তা চরম অসভ্যতার নজির। তাঁকে সচিবালয়ে যেভাবে তল্লাশি করা হয়েছে, তার কোনো আইনি ভিত্তি আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি বলেন, রোজিনা ইসলামের সঙ্গে এ ধরনের আচরণে সাংবাদিকদের মনোবল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সাংবাদিক শামীমা দৌলা বলেন, রোজিনা ইসলাম মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কঠোর আন্দোলন চলবে। সরকারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে। সাংবাদিকদের সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবেদন করার আহ্বান জানান তিনি।

রোজিনা ইসলামকে আজ শাহবাগ থানা থেকে বেলা ১১টার পর পর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেওয়া হয়। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড আবেদন নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর জামিনের শুনানি হতে পারে।

পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে রোজিনা ইসলামকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।