লাইন এগোলেও এগোতে পারছিলেন না মিতু

সকাল নয়টা। মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ে ১১ নম্বর সড়কেই ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রির দোকানের সামনে একে একে নিম্ন আয়ের লোকজন জড়ো হচ্ছেন। তখন কোলে ১৯ মাসের ছেলে আর আরেক হাতে চার বছরের মেয়েকে ধরে এসে লাইনে দাঁড়ান গৃহিণী মিতু আক্তার। সেই দোকান থেকে চাল ও আটা কিনতে এসেছেন তিনি। লাইন এগোলেও তিনি এগোতে পারছিলেন না।

আড়াই ঘণ্টা রোদে পুড়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত মিতু প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রচুর রোদ। গরমে পোলাডা কান্নাকাটি করছে। ছোট মাইয়াডাও রোদে আর দাঁড়িয়ে থাকতে চাইছে না। তাগো জন্যই কয়েকবার লাইন ছাড়তে হইসে। ফিইরা আর আগের জায়গায় দাঁড়াইতে পারিনি।’

মিতু যখন কথাগুলো বলছিলেন, তখন ঘড়ির কাঁটায় ১১টা ৩৭ মিনিট। কোলের ছেলে মেহেদী তখনো কান্নাকাটি করছিল। মায়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকা সুমাইয়াও অস্থির হয়ে পড়েছিল। বারবার মায়ের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ছায়ার দিকে চলে যাচ্ছিল সে।

মিতুর এমন অবস্থা দেখে খাদ্য অধিদপ্তরের ওএমএসের পরিবেশক মো. আসাদুজ্জামানের দোকানের প্রতিনিধি সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলোর প্রতিবেদক। এ বিষয়ে ওই দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়ানো অন্যদের মতামত জানতে চাওয়া হয়। পরে মিতুর অবস্থা দেখে লাইন ছাড়াই মিতুকে চাল ও আটা কেনার অনুমতি দেন লাইনের অন্য নারীরা।

সবশেষে পৌনে ১২টায় পণ্য কেনার সুযোগ পান মিতু। ওই দোকান থেকে তিনি ৫ কেজি চাল ১৫০ টাকায় এবং ৫ কেজি আটা ৯০ টাকায় কেনেন। ১০ কেজি চাল–আটা আর ছেলেকে কোলে করে ও মেয়েকে হাঁটিয়ে বাসার দিকে হাঁটতে থাকেন মিতু।

রিকশায় যাচ্ছেন না কেন, জাইতে চাইলে মিতু বলেন, ‘সকালে জামাইরে কইলাম, ঘরে একটাও চাল নাই। তখন হে (স্বামী) ২৫০ টাকা হাতে ধরাই দিসে। আর বলসে, যাও একটু কষ্ট কইরা সরকারের বিক্রি করা চাল নিয়া আস।’ চাল কেনার সুযোগ করে দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মিতু বলেন, ‘আসল কষ্ট থেকে তো বাঁচাই দিলেন। এখন কষ্ট হইলেও হাইটাই যাইতে পারমু।’

ওই দোকানের বিক্রয় প্রতিনিধি সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাচ্চা কিংবা কোলের সন্তান সঙ্গে নিয়ে আসা নারী ও বয়স্ক নারীদের আগে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু প্রায় এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা হয়। তাই সবার মন রক্ষার্থে এটা করা সম্ভব হয় না।’