শততম জন্মদিনে গ্যালারিতে সফিউদ্দীনের দুর্লভ চিত্রকর্ম

সফিউদ্দীন আহমেদের শততম জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ও ছাপচিত্র উৎসবের উদ্বোধনে অতিথিরা। গতকাল ধানমন্ডির সফিউদ্দীন শিল্পালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

আমৃত্যু শিল্পসাধনা করে গেছেন সফিউদ্দীন আহমেদ। শুদ্ধাচারী বলতে যা বোঝায়, তিনি ছিলেন সে রকম এক শিল্পী। নিজের কাজকে তিনি যেমন নিখুঁত রূপ দিয়েছেন, তেমনি জীবনযাপনেও পড়েছিল সেই ছায়া। শিল্পকর্মের পরতে পরতে রেখে গেছেন ইতিহাসের চিহ্ন। আর কদিন পর, ২৩ জুন তাঁর শততম জন্মদিন। দিনটি উদ্‌যাপনের ক্ষণে শিল্পরসিকদের সামনে এসেছে এক অভাবনীয় সুযোগ। ঘর থেকে বের করে গ্যালারিতে আনা হয়েছে তাঁর দুর্লভ সব চিত্রকর্ম।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে ধানমন্ডির সফিউদ্দীন শিল্পালয়ে শুরু হয়েছে তাঁর একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ও ছাপচিত্র উৎসব। সফিউদ্দীন ছিলেন এই উপমহাদেশে ছাপচিত্রের অগ্রগণ্য এক শিল্পী। শিল্পালয়ের দ্বিতীয় তলায় তরুণ ছাপচিত্রীদের সঙ্গে রয়েছে তাঁর ও বেশ কজন খ্যাতিমান শিল্পীর ৩০০ ছাপচিত্র। এক হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত দামে সেসব সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে। শিল্পালয়ের তৃতীয় তলায় প্রদর্শিত হয়েছে নানা মাধ্যমে আঁকা সফিউদ্দীনের ৫৫টি চিত্রকর্ম। এগুলোর বাছাই-বিন্যাস করেছেন আহমেদ নাজির। তিনি জানান, সেখানে কিছু চিত্রকর্ম রয়েছে, যেগুলো পরিবারের সদস্য ছাড়া আর কেউ আগে দেখেননি।

সফিউদ্দীন আহমেদ নীরবে নিভৃতে শিল্প সাধনা করে গেছেন। সাধারণ মানুষের কাছে এখনো তাঁর নাম পৌঁছায়নি। এখন সেটা করা দরকার।
আসাদুজ্জামান নূর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সংসদ সদস্য

অতিথি হিসেবে এ আয়োজন উদ্বোধন করেন চিত্রকর রফিকুন নবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। শিল্পী মো. মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান সৈয়দ আজিজুল হক।

রফিকুন নবী বলেন, ‘রঙের ওপর রং চড়িয়ে স্তর তৈরি করতেন সফিউদ্দীন স্যার। তারপর আমাদের ডেকে পাঠাতেন। তিনটি আগ্রহ নিয়ে আমরা সেখানে ছুটে যেতাম। স্যারের আঁকা নতুন ছবি দেখা, তাঁর সংগ্রহ করা নতুন গান শোনা ও তাঁর স্ত্রীর বানানো সুস্বাদু আলুর দম খাওয়া। স্যার আমাদের কাছে ছবির ব্যাপারে মতামত জানতে চাইতেন। দেখা যেত, তিন বছর পর একই ছবির ওপর নতুন কাজ করে তিনি আবারও আমাদের ডেকে পাঠাতেন। আমরা গিয়ে দেখি সেই ছবি আর আগের মতো নেই।’

সফিউদ্দীন চিত্রকর্ম বিক্রি করতে চাইতেন না। বন্ধু, অনুরাগী ও সহকর্মীদের বলতেন, ‘কার না কার কাছে যাবে, দেখা যাবে সে হয়তো ছবিই বোঝে না!’ পরম যত্নে সেসব নিজেই সংগ্রহ করে রাখতেন। আজিজুল হক বলেন, ‘যক্ষের ধনের মতো তিনি সেসব আগলে রেখেছিলেন বলে আজ আমরা সেগুলো দেখতে পেলাম। এসব ছবি এখন আমাদের জাতীয় সম্পদ।’

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘সফিউদ্দীন আহমেদ নীরবে নিভৃতে শিল্প সাধনা করে গেছেন। সাধারণ মানুষের কাছে এখনো তাঁর নাম পৌঁছায়নি। এখন সেটা করা দরকার। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পটুয়া কামরুল হাসানের পাশাপাশি শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের নামটিও পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে হবে।’

প্রদর্শনীর উদ্বোধনে এসেছিলেন শিল্পাঙ্গনের প্রথিতযশা ও প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীরা। ১৯৩৮ সালে জলরঙে আঁকা একটি ছবি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন তাঁদের অনেকে। প্রদর্শনী ও ছাপচিত্র উৎসব চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রতিদিন সেটি উন্মুক্ত থাকবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।