শরীফ উদ্দিনকে নিয়ে ১০ আইনজীবীর চিঠি, যথাযথ আবেদন নিয়ে আসতে বললেন হাইকোর্ট

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক পদ থেকে চাকরিচ্যুত মো. শরীফ উদ্দিন

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক পদ থেকে চাকরিচ্যুত মো. শরীফ উদ্দিনের বরখাস্তের ঘটনায় সংক্ষুব্ধ হলে যথাযথ আবেদন নিয়ে আসার কথা বলেছেন হাইকোর্ট। মো. শরীফ উদ্দিনের জীবনের নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় আদেশের আরজি নিয়ে দেওয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর উদ্দেশে এসব কথা বলেন।

শরীফের বিষয়ে ওই আরজি নিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরসহ ১০ আইনজীবী হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে ওই চিঠি দেন। হাইকোর্ট রুলসের (সংশোধিত) বিধি অনুসারে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবেদন (রিট) হিসেবে বিবেচনা করার আরজি জানানো হয় চিঠিতে।

আজ সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে চিঠির বিষয়টি বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে তুলে ধরেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

রিট দায়েরে অসুবিধা কোথায়

শুরুতে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘আদালতের কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর কপি পেয়েছেন কি?’ তখন আদালত বলেন, ‘ইয়েস। আমরা দেখেছি। আপনি যদি মনে করেন, তাহলে রিট দায়ের করেন। এতে অসুবিধা কোথায়?’

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘হাইকোর্ট রুলস অনুসারে চিঠিটি দাখিল করা হয়েছে।’ আদালত বলেন, ‘আপনার রিট করতে বাধা তো নেই। যথাযথ আবেদন নিয়ে আসতে পারেন। আমাদের মাধ্যমে সুয়োমটো (স্বতঃপ্রণোদিত) না করে আপনি আবেদন নিয়ে আসতে পারেন, যদি আপনি প্রকৃত অর্থে দুদকের ওই কার্যক্রম নিয়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকেন।’

তখন শিশির মনির বলেন, ‘হাইকোর্ট রুলস অনুসারে এবং রুলসে যে কথা আছে...।’ তখন আদালত বলেন, ‘হাইকোর্ট রুলস যেটি পড়ছেন, তা সম্পর্কে আমরা অবগত। আমরা পারি। তবে যেহেতু বিষয়টি আপনার নলেজে আছে, আপনি আমাদের সরবরাহ করছেন, আপনার কাছে আবেদনকারী আছে, তাহলে যথাযথ আবেদন নিয়ে সরাসরি আসতে প্রবলেম কী?’

তখন শিশির মনির বলেন, ‘কোনো প্রবলেম নেই।’

আদালত বলেন, ‘সাধারণত যেগুলো জনস্বার্থে হয়, সেগুলো করি (স্বতঃপ্রণোদিত)। এটি তো একটি ব্যক্তিগত সংক্ষুব্ধতা।’

শিশির মনির বলেন, ‘এটি জনস্বার্থ বলছি এ জন্য যে এটি দুদকের ভাবমূর্তির প্রশ্ন। কারও পক্ষে-বিপক্ষে বলছি না।’

আদালত বলেন, ‘পিটিশনার কে?’ তখন শিশির মনির বলেন, ‘এখানে সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবী বিষয়টি নিয়ে এসেছি। আমি কারও পক্ষে-বিপক্ষে নই। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এসেছে, যা আদালত দেখতে পারেন।’

আদালত বলেন, ‘দরখাস্ত দেন, দরখাস্ত দিতে বাধা তো নেই। যা কিছু আছে, তা যুক্ত করে, কীভাবে সংক্ষুব্ধ হলেন ব্যাখ্যা দিয়ে আমাদের কাছে আসেন।’

তখন শিশির মনির বলেন, ‘ইস্যুটি গুরুত্বপূর্ণ এই অর্থে যে এখানে ইমেজের বিষয়টি এসেছে। এই ইমেজ সংরক্ষণ করা আমাদের সবারই দায়িত্ব; কোনো ব্যক্তিবিশেষের দায়িত্ব নয়।’

আদালত বলেন, ‘সুয়োমটো না দিয়ে আপনি যদি সব যুক্তি, স্টেটমেন্ট ও ফ্যাক্ট দিয়ে নিয়ে আসেন (রিট আবেদন), তাহলে আরও ভালো হবে না? এটি আরও সমৃদ্ধ হবে। আপনি যদি সব ফ্যাক্ট দিয়ে ব্যাখ্যা করেন, তাহলে বিষয়টি বুঝে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া আরও সহজ হবে।’

শিশির মনিরের উদ্দেশে আদালত আরও বলেন, ‘আপনি যদি মনে করেন, প্রকৃত অর্থে সংক্ষুব্ধ হন, আইন অনুসারে যেভাবে আসা উচিত, সেভাবে আসেন।’

শিশির মনির বলেন, ‘আইন অনুসারে আমি আদালতে আসব।’

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘তাহলে ওই চিঠির স্ট্যাটাসটি কী হবে? প্রত্যাখ্যান?’

আদালত বলেন, ‘এটি ফেরত দেওয়া হবে। এটি ফেরত নেন।’

তখন শিশির মনির বলেন, ‘এটি আদালতের কাছে থাকলেও কোনো অসুবিধা নেই। আদালতের কাছে থাকুক।’ আদালত বলেন, ‘থাকুক।’

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক শুনানিতে ছিলেন।
১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি শরীফকে নিয়ে গণমাধ্যমে আসা নয়টি প্রতিবেদন যুক্ত করে ওই চিঠি দিয়েছিলেন শিশির মনিরসহ ১০ আইনজীবী। অপর নয় আইনজীবী হলেন রেজওয়ানা ফেরদৌস, জামিলুর রহমান খান, উত্তম কুমার বণিক, মুস্তাফিজুর রহমান, মো. তারেকুল ইসলাম, আহমেদ আব্দুল্লাহ খান, সৈয়দ মোহাম্মদ রায়হান, মো. সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নওয়াব আলী।

হাইকোর্ট রুলেসের প্রসঙ্গ তুলে ধরে চিঠির শেষাংশের ভাষ্য, ১১ ক অধ্যায়ের ১০ বিধি অনুযায়ী চিঠিটি সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবেদন হিসেবে বিবেচনা করে সংযুক্ত প্রতিবেদনগুলো (গণমাধ্যমে আসা) আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানো এবং দুদকের চাকরিচ্যুত উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনের জীবনের নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় আদেশ বা ক্ষেত্রমতো উপযুক্ত আদেশ প্রদানে আপনার একান্ত মর্জি হয়।