শাহজালাল বিমানবন্দরে ‘যাত্রীসেবায়’ জ্বলছে ধূপ
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। রাজধানী ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমস সংলগ্ন এয়ারপোর্ট রেস্তোরাঁর সামনে অসংখ্য মানুষ বেঞ্চে বসে আছেন। তাঁদের অনেকের পায়ের সামনে জ্বলছে কয়েল।
শুধু রেস্তোরাঁ নয়, সন্ধ্যা নামতেই বিমানবন্দরের টার্মিনাল ও ক্যানপির ফটকগুলোতে জ্বলছিল ধূপ ও ধোঁয়াবিহীন কয়েল। এ ধূপ ও কয়েল জ্বলছিল মশা তাড়াতে।
ফেনী সদরের বাসিন্দা জাকির হোসেন বিমানবন্দরে এসেছেন ছোট ভাইকে বিদায় জানাতে। জাকির প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে মশার যে অবস্থা, কয়েল না জ্বালিয়ে কোনো উপায় আছে? মশার কামড়ে বসে থাকতে পারছি না। যেখানে যাই, সেখানেই মশা।’
এ বিমানবন্দরে প্রতিদিন ২৭টি এয়ারলাইনসের ১১০ থেকে ১২৮টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। এসব ফ্লাইটে দৈনিক প্রায় ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেড়েছে মশার উৎপাত। দিনের বেলায় এ সমস্যা কম থাকলেও বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন যাত্রীরা। তাই মশা তাড়াতে ওষুধের পাশাপাশি সন্ধ্যা হলেই ধূপ ব্যবহৃত হচ্ছে বিমানবন্দরে।
এদিকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বিমানবন্দরের ভেতরে কোনো মশার উৎপত্তিস্থল নেই। বিমানবন্দরের ভেতরে যেসব জলাধার আছে, এগুলোতে মশা হয় না। আশপাশের পাঁচ কিলোমিটার এলাকা থেকে মশা উড়ে বিমানবন্দরে আসে।
শাহজালাল বিমানবন্দরে মশার উপদ্রবের সমস্যাটি বেশ পুরোনো। প্রতিবছর শীতকাল এলেই মশা বাড়ে। এ বিমানবন্দরে প্রতিদিন ২৭টি এয়ারলাইনসের ১১০ থেকে ১২৮টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। এসব ফ্লাইটে দৈনিক প্রায় ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১, ২ ও ক্যানপি-১, ২ এ গিয়ে দেখা যায়, মশার উৎপাত থেকে বাঁচতে কেউ কেউ কয়েল ধরিয়েছেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে টার্মিনাল-১ ও ২–এর ছয়টি গেটের সামনে মশা তাড়াতে ধূপ জ্বালানো হয়। আন্তর্জাতিক আগমনীর (ইন্টারন্যাশনাল অ্যারাইভাল) ক্যানপি-১ ও ২–এর গেটের সামনেও ধূপ জ্বলতে দেখা যায়।
যাত্রী ও স্বজনদের অভিযোগ, মশার উপদ্রবে বিমানবন্দরের টার্মিনালে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। বিমানবন্দরের কার পার্কিং ভবনের তৃতীয় তলার ছাদে অপেক্ষা করছিলেন চট্টগ্রাম থেকে আসা প্রান্ত বড়ুয়া। তাঁর বড় ভাই দুবাই যাবেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিমানবন্দরে অনেক মশা। এত মশা যে দাঁড়ানোই যাচ্ছে না। দুই হাত ব্যস্ত মশা তাড়াতে। হাত স্থির রাখলে মশার ঝাঁক এসে বসে। তিনি আরও বলেন, টার্মিনালের প্রতিটি গেটের সামনে ধূপ জ্বালানো হয়েছে। এ কারণে সব মশা কার পার্কিংয়ের এদিকে চলে আসছে।
অন্ধকার হওয়ার আগেই দেখি চারপাশে মশা। মশা থেকে বাঁচতে রাস্তার ওপারে দৌড়ে গেলাম কয়েল কিনে আনতে। আগে জানলে বাড়ি থেকেই কয়েল নিয়ে আসতাম।
আগমনী টার্মিনালের সামনে ক্যানপি-১ এ গিয়েও দেখা গেল মশার উৎপাত। দেড় বছর বয়সী কন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে চেন্নাই থেকে এসেছেন মো. আরমান। উড়োজাহাজ থেকে নেমে সব ধরনের কার্যক্রম শেষে ক্যানপি-১–এ এসে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। এ সময় ক্ষোভ জানালেন বিমানবন্দরের মশার উৎপাত নিয়ে। আরমান বলেন, ‘বিমানবন্দরে এসে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ। আমাকে কামড়াচ্ছে, তার চেয়ে বড় বাচ্চাটাকে মশা কামড়াচ্ছে। বাচ্চার কথা ভেবে দুশ্চিন্তা হচ্ছে।’
একই ফ্লাইটে আসা যাত্রী নাসিমুল হক জানান, বিমানবন্দরে ক্যানপি-১–এ অনেক মশা। মশার কামড়ে দাঁড়ানো দায়।
শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান বলেন, ‘মশার জন্য আমরা বসে নেই। সারা বছর মশা নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দর কাজ করে। ঝোপ, নালা পরিষ্কার করি, মশার লার্ভা নিধন করি। সকালের লার্ভিসাইড, বিকেলে ফগিং মেশিন দিয়ে ইনসেকটিসাইড দেওয়া হয়। ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার করি।’
তৌহিদ-উল আহসান বলেন, টার্মিনালের প্রতিটি গেটে ধূপ দেওয়া হচ্ছে। বিমানবন্দরের আশপাশের চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার এলাকা থেকে মশা বেশি আসে।’
কুমিল্লার চান্দিনা থেকে এসেছেন রাজিউল হক। তাঁর ভাই যাবেন দোহায়, ফ্লাইট রাত ১০টা ৫০ মিনিটে। দুপুরে তাঁরা বিমানবন্দরে এসেছেন। বিকেল গড়াতেই তাঁরা দেখলেন মশার উপদ্রব। রাজিউল বলেন, ‘অন্ধকার হওয়ার আগেই দেখি চারপাশে মশা। মশা থেকে বাঁচতে রাস্তার ওপারে দৌড়ে গেলাম কয়েল কিনে আনতে। আগে জানলে বাড়ি থেকেই কয়েল নিয়ে আসতাম।’