শিল্পীর আঁচড়ে ঢাকার সমস্যা

ঢাকা শহর যে ক্রমেই বসবাসের যোগ্যতা হারাচ্ছে, গবেষণাধর্মী প্রদর্শনীটি সেই দিকগুলোই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

‘শৈল্পিক দৃষ্টিতে ঢাকার সমস্যা’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে শিল্পকর্ম দেখছেন দর্শকেরা। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ গ্যালারিতে।
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানী হিসেবে ৪০০ বছরের পুরোনো এই শহরের অবস্থা বাস্তবে এখন কেমন, তার শৈল্পিক উপস্থাপন করেছেন দেশের খ্যাতিমান ও নবীন শিল্পী আর শিশুরা। তাঁদের প্রায় ৭০টি শিল্পকর্ম নিয়ে ‘শৈল্পিক দৃষ্টিতে ঢাকার সমস্যা’ নামে ব্যতিক্রমী প্রদর্শনীটি চলছে ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কের আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে।

এটি আন্তর্জাতিক গবেষণাধর্মী প্রকল্প থেকে পাওয়া তথ্য–উপাত্ত এবং অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে সৃজিত শিল্পকলার প্রদর্শনী। এই গবেষণা প্রকল্পটি বিশ্বের আটটি দেশের ১৪টি শহরে কাজ করছে। বাংলাদেশে এটি পরিচালনার কাজ করছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। গত ২৭ মে থেকে শুরু হয়েছে এই প্রদর্শনী, চলবে ৭ জুন পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত প্রদর্শনী চলে।

প্রদর্শনীর আয়োজক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শিল্পী রায় বলেন, প্রদর্শনীর কাজগুলো বাস্তবধর্মী। কাজগুলো যেন নগরের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং নীতিনির্ধারকদের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সহায়ক হতে পারে, সেই আলোকেই করা হয়েছে। এই প্রকল্পে শিল্পীদের সঙ্গে নগর–পরিকল্পনাবিদ, স্থপতিরাও অংশ নিয়েছেন।

শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন কাজী গিয়াসউদ্দিন, শহীদ কবির, ঢালী আল মামুন, মাহবুবুর রহমান, তৈয়বা বেগম লিপি, সুনন্দা রানি বর্মণ, মাহমুদুল হাসান, মোজাহিদুর রহমান সরকার, কুন্তল বাড়ৈ এবং এস এম শাহ আনিসুজ্জামান। তাঁদের বিভিন্ন মাধ্যমের কাজ আছে ৪০টি। এ ছাড়া ৩০ জন শিশুর শহর নিয়ে আঁকা ছবি রয়েছে।

লা গ্যালারিতে ঢুকলেই মনে হবে যেন নির্মাণাধীন কোনো ভবনের কক্ষ, যেখানে ছাদ ঢালাইয়ের জন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেকা দিয়ে রাখা হয়েছে। এটিও মূলত প্রদর্শনীরই অংশ। ঢাকায় যে অজস্র ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, তার প্রতীকী উপস্থাপনা। এ ছাড়া আছে বস্তির নানামুখী সমস্যা, বিশুদ্ধ পানির সংকট, বস্তির শিশুদের শিক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা না থাকা, ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ড—এসবও আছে। ঢাকার মহল্লাভিত্তিক সমস্যাগুলো ১১টি শ্রেণিতে চিহ্নিত করে সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে মিশ্র মাধ্যমের ছবিতে। এর মধ্যে মাঠ ও গণপরিসরের অভাব, জলাবদ্ধতা, নিরাপত্তাহীনতা—এসব উঠে এসেছে।

এ ছাড়া বায়ুদূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংকট, অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ, জলাশয় ও পনিপ্রবাহের স্থান ভরাট করে ভবন নির্মাণ, শহরতলি এলাকায় মাটি কেটে শত শত ইটভাটা তৈরি, বৃক্ষনিধন, স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রের বিনাশ—এমন বিভিন্ন সংকট তুলে ধরেছেন শিল্পীরা। ঢাকা শহর যে ক্রমেই বসবাসের যোগ্যতা হারাচ্ছে, গবেষণাধর্মী এই প্রদর্শনী সেই দিকগুলোই আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।