শিশু পরিবারের দুই মেয়ের বিয়েতে অতিথি মন্ত্রীসহ ৭০০ জন

বিয়ের আসরে কনের বেশে আল-নাহিয়ান শিশু পরিবারের সদস্য শিউলি আক্তার ও রত্না আক্তার
ছবি: প্রথম আলো

মাঠজুড়ে বিশাল শামিয়ানা টাঙানো। চারপাশে নানা খাবারের ঘ্রাণ। অতিথিরা চলে এসেছেন। আয়োজকেরা ব্যস্ত তদারকিতে। শামিয়ানার নিচে বিয়ের মঞ্চে মধ্যমণি হয়ে কনের সাজে বসে আছেন শিউলি আক্তার ও রত্না আক্তার। পাশেই বসে আছেন দুই বর। বিয়েতে অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদসহ প্রায় ৭০০ জন। পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক আবদুল হাকিম বলেন, ২৬ বছর পর মিরপুরের আল-নাহিয়ান শিশু পরিবার প্রাঙ্গণে বিয়ের আসর বসেছে।

শিউলি ও রত্না শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান ট্রাস্টের আল-নাহিয়ান শিশু পরিবারের সদস্য। তাঁরা এই শিশু পরিবারে আসেন ২০০৭ সালে। এর আগে দুজন ছিলেন সরকারের ছোটমণি নিবাস ও পরে বেসরকারি সংস্থা জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির শেল্টার হোমে। দুজনই পড়াশোনা করেছেন এসএসসি পর্যন্ত।

বিয়ের আসরে শিউলি ও রত্নার পাশেই বসে ছিলেন বর আশরাফুল ইসলাম ও শাকিল মিয়া। আশরাফুল ইসলাম সৌদিপ্রবাসী। শাকিল মিয়া পোশাকশিল্প কারখানায় সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত।

গত শনিবার রাজধানীর মিরপুরে আল-নাহিয়ান শিশু পরিবার প্রাঙ্গণে জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে বিয়ে হয় শিউলি ও রত্নার। এ সময় বর ও কনেদের শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান, সচিব মাহফুজা আখতার, ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

শিউলি ও রত্নার কারণে দীর্ঘ ২৬ বছর পর আল-নাহিয়ান শিশু পরিবার প্রাঙ্গণে বিয়ের আসর বসেছে—এমনটাই জানালেন পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, এই শিশু পরিবারে এতিম মেয়েশিশুরা থাকে। পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে শিশুদের ভর্তি করানো হয়। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তারা এখানে থাকতে পারে। বর্তমানে এখানে বসবাস করে ১২২ শিশু।

আল-নাহিয়ান শিশু পরিবারের সদস্য শিউলি আক্তার ও রত্না আক্তারের বিয়েতে আসা অতিথিদের একাংশ
ছবি: প্রথম আলো

আবদুল হাকিম আরও বলেন, ‘পরিবারের শিশুরা আমাকেই বাবা ডাকে। বলতে গেলে আমিই দুই মেয়ে শিউলি ও রত্নার বিয়ের ঘটক ছিলাম। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক গিয়াসউদ্দীন মোগলসহ সবাই বিয়েতে সহায়তা করেছেন। বিয়েতে ছেলেপক্ষ যৌতুক দাবি করেনি।’

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত হয় আল-নাহিয়ান শিশু পরিবারটি। তবে এখানকার মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির আলাদা বাজেট বরাদ্দ নেই। আবদুল হাকিম জানান, শিউলি ও রত্নার বিয়েতে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ দুই লাখ টাকা দিয়েছেন। ঢাকার জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বিয়েতে ১৫০ জন বরযাত্রীসহ মোট ৭০০ অতিথির আপ্যায়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে দুজনকে এক লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

আবদুল হাকিম বলেন, এই শিশু পরিবারে বেড়ে ওঠা মেয়েদের যাঁরা বিয়ে করেছেন, তাঁরা তাঁদের সার্বিক অবস্থা জেনেবুঝেই বিয়ে করেছেন। তাঁর আশা, ভবিষ্যতে মেয়েদের পরিবারে এ নিয়ে অশান্তি হবে না। তবে কোনো কারণে সংসারে অশান্তি হলে শিশু পরিবার কর্তৃপক্ষ সব সময় মেয়েদের পাশে থাকবে বলেও জানান তিনি।