শীতের সন্ধ্যায় জমজমাট ব্যাডমিন্টন উৎসব

সন্ধ্যা ঘনাতেই জমে উঠেছে খেলা। কোর্ট থেকে ভেসে আসছে ‘থার্টিন হোপ’, ‘ফোরটিন লাস্ট’ চিৎকার। পাশে অপেক্ষমাণ খেলোয়াড়, দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা। রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই এখন চোখে পড়ে এমন দৃশ্য। শীতের শুরু থেকেই শুরু হয়ে গেছে শীতের খেলা ব্যাডমিন্টন।
ব্যাডমিন্টন এ দেশে ‘মৌসুমি’ খেলা। বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ব্যাডমিন্টন খেলার ধুম পড়ে যায়। এবারও হালকা শীত পড়তেই পাড়া-মহল্লায় শুরু হয়ে গেছে ব্যাডমিন্টন খেলার ধুম। মাঠ-ফাঁকা জায়গাগুলোয় কাটা হয়েছে ব্যাডমিন্টনের কোর্ট। তরুণদের পাশাপাশি মধ্যবয়সীরাও যোগ দিচ্ছেন ব্যাডমিন্টন উৎসবে। পিছিয়ে নেই নারীরাও।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য কাটা হয়েছে কোর্ট। আজিমপুর, মিরপুর, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, মণিপুর, ইন্দিরা রোড এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি মাঠেই একাধিক কোর্ট কাটা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের প্রায় সব হলেই কাটা হয়েছে ব্যাডমিন্টন কোর্ট। হলের ভেতরের এসব কোর্টে খেলা চলেও তুলনামূলক বেশি রাত পর্যন্ত।
কোনো কোর্টে জ্বলছে দুটি হ্যালোজেন বাতি, কোনোটায় কাঠের বোর্ডে লাগানো দুই শ ওয়াটের আট-দশটি হলদেটে বৈদ্যুতিক বাতি। শীতল বাতাস খেলায় যাতে বিঘ্ন না ঘটাতে পারে, তাই কোর্টের চারপাশে টানানো হয়েছে পাটের তৈরি চট।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ইরফানুল হক প্রতিবছরই ব্যাডমিন্টন খেলেন। তিনি বলেন, ‘শীতের রাতে ব্যাডমিন্টন খেলতে ভালো লাগে। কলেজজীবন থেকেই ব্যাডমিন্টন খেলি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে প্রতিবছরই খেলছি।’
যাঁরা সন্ধ্যায় ব্যাডমিন্টন খেলেন, তাঁদের অনেকেরই সারা দিন ক্লাস কিংবা অফিস করেই সময় কাটে। সন্ধ্যা নামতেই হাজির হন ব্যাডমিন্টন কোর্টে। বিনোদন অবশ্যই একটা বড় পাওয়া। শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক রাখতেও ব্যাডমিন্টন খেলছেন অনেকে।
রাজধানীর বেশির ভাগ স্কুলেই বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। ফলে স্কুলপড়ুয়ারাও সন্ধ্যার পর র্যা কেট হাতে বেরিয়ে পড়ছে। অভিভাবকেরা মাঝেমধ্যে মাঠে গিয়ে হাজিরা দিচ্ছেন ছেলেরা কী করছে সেই খোঁজ নিতে।
একসঙ্গে এক খেলায় চারজনের বেশি খেলতে পারে না বলে পাশাপাশি কয়েকটি কোর্ট কাটা হয়। অপেক্ষমাণ খেলোয়াড়দের সঙ্গে উৎসাহী দর্শক যোগ দেওয়ায় কোর্টের পাশেই তৈরি হচ্ছে জটলা। ব্যাডমিন্টন খেলার উপযোগী কোর্ট তৈরি ও সরঞ্জামে বেশ খরচাপাতির প্রয়োজন। তাই যারা প্রতিদিন খেলবে, তাদের দিতে হয় নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফারহান জুলকারনাইন থাকেন কল্যাণপুরে। শীতের শুরুতেই বন্ধুদের সঙ্গে কোর্ট কেটেছেন। তিনি বলেন, বন্ধুবান্ধব, এলাকার বড় ভাইয়েরা সবাই উপস্থিত থাকে। তাই খেলার পাশাপাশি আড্ডা দেওয়া যায়। সারা দিন কাজের পরে বেশ ভালোই সময় কাটে।
শীতের রাতে খেলা চলবে আর গরম-গরম ভাপা-চিতই পিঠা খাওয়া হবে না তা কি হয়। পিঠা ছাড়াও চা, চটপটি-ফুচকা, কখনো চানাচুর-মুড়ি মাখানো এসব তো আছেই, কোনো উপলক্ষ পেলে কোর্টেই আয়োজন করা হয় বিশেষ ভোজের।
অনেক এলাকায় ‘ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট’-এর আয়োজনও চোখে পড়ে। নতুন বছর সামনে রেখে অনেক এলাকাতেই আয়োজন করা হচ্ছে প্রতিযোগিতা।