সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রথাগত হিন্দু আইন সংস্কারের দাবি

প্রথাগত হিন্দু আইন সংস্কারের দাবিতে ডিআরইউতে আজ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশে প্রচলিত প্রথাগত হিন্দু আইনে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নানাভাবে বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ। এ আইন সংস্কার করে সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে তারা। আজ শুক্রবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তোলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সংস্কৃত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ময়না তালুকদার। সেখানে তিনি বলেন, ভারত, নেপাল, মরিশাসেও হিন্দু আইন সংস্কার হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকার হিন্দু আইন সংস্কারের কাজে হাত দেয়নি। সংবিধানে বলা আছে, মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কোনো আইন থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে। কিন্তু প্রচলিত হিন্দু আইনে নারী, প্রতিবন্ধী বা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উত্তরাধিকার আইনে লিঙ্গবৈষম্য দূর করা, অভিভাবকত্ব আইনে মা-বাবার সমান অধিকার, দত্তক আইন সংস্কার, বিবাহবিচ্ছেদ আইন প্রণয়ন এবং বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার দাবি জানায় এই পরিষদ।

রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী মামলা পরিচালনা করতে গেলে প্রচলিত হিন্দু আইনের সঙ্গে তা সাংঘর্ষিক হয় উল্লেখ করে হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ বলছে, বাংলাদেশে যে হিন্দু আইন আছে তা ধর্মীয় আইন না। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য এই আইন সংস্কার প্রয়োজন। মানুষ হিসেবে কাউকে অধিকার থেকে বঞ্চিত না করে ন্যায় প্রতিষ্ঠা, সমঅধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা হলে হিন্দু সম্প্রদায় ও দেশের উন্নতি হবে, নারীরা আত্মনির্ভরশীল হবে এবং পরিবার শক্তিশালী হবে।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পুলক ঘটক সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের সঙ্গে অধিকার ও সম্পদের প্রশ্ন এবং অর্থনীতি জড়িত। কেউ যদি কায়েমি স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য কারও অধিকারকে অস্বীকার করতে চায়, তা রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। একজন মানুষও যদি ন্যায্য দাবি করে তাকে বঞ্চিত করার অধিকার কারও নেই।

পুলক ঘটক আরও বলেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হিন্দু আইন সংস্কার চায়। দেশে একেক হিন্দু সমাজে প্রথাগত আইন একেক রকম। একই দেশে অভিন্ন আইন হতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকারকর্মী রীনা রায় বলেন, আজ ৩ সেপ্টেম্বর সিডও দিবস। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য নিরসনের দিবস এটি। সিডও সনদে বলা আছে, নারীর প্রতি যেকোনো ধরনের বৈষম্যমূলক আইন বাতিল বা সংস্কার করতে হবে। কিন্তু এত বছর পরও এখন পর্যন্ত পারিবারিক আইনের বৈষম্য দূর করা যায়নি। তিনি আরও বলেন, ‘হিন্দু জনগোষ্ঠী একত্র না, এক সুরে কথা বলছে না। সবাইকে এক হয়ে এই আইন সংস্কার করতে হবে।’