২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে শাহবাগে অবরোধ প্রত্যাহার

শাহবাগে চার ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।ছবি: দীপু মালাকার

দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ, মন্দিরসহ হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আয়োজিত অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ হয়েছে। সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দিয়ে পৌনে চার ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়েছেন। শাহবাগে এখন যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

আরও পড়ুন

আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শাহবাগ মোড়ের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। শিক্ষকেরা এতে সংহতি জানান। কয়েক শ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অবরোধ-বিক্ষোভের কারণে শাহবাগ থেকে পল্টন, সায়েন্স ল্যাব, বাংলামোটর ও টিএসসি অভিমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা সোয়া দুইটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়৷

শাহবাগে বিক্ষোভরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা
ছবি: দীপু মালাকার

এই কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছে সাত দফা দাবি জানান। এগুলো হলো: হামলার শিকার মন্দিরগুলোর শিগগিরই প্রয়োজনীয় সংস্কার করা, বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার পরিবারগুলোকে স্থায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা, জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে মন্দির ও সংখ্যালঘুদের বাসাবাড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলার দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও কমিশন গঠন, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে আধুনিকায়ন করে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা এবং জাতীয় বাজেটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য জিডিপির ১৫ শতাংশ বরাদ্দ করা।

বেলা সোয়া দুইটার দিকে জগন্নাথ হলের ছাত্র ও হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়জিৎ দত্তের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। তিনি বলেন, ‘মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দাবিগুলোর বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানা হলে এবং এর মধ্যে দেশের কোথাও এ ধরনের হামলা-ভাঙচুর বা সহিংসতার ঘটনা ঘটলে আমরা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে। জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য আপাতত ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে আমরা আজকের কর্মসূচি এখানেই শেষ করছি।’

বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বসে পড়েন
ছবি: দীপু মালাকার

জয়জিৎ দত্ত আরও বলেন, ‘আশা করেছিলাম আমাদের সাত দফা দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহল থেকে কোনো একটা আশ্বাস আসবে। কিন্তু সে রকম কোনো আশ্বাস আমরা পাইনি। ইসকন বাংলাদেশ আমাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছে এবং তাদের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা এ ব্যাপারে আশাবাদী।’

রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা
ছবি: দীপু মালাকার

এর আগে সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের অবরোধ শুরু হওয়ার পর সেখানে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহা, সাবেক প্রাধ্যক্ষ অসীম কুমার সরকার ও আইন বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল।

দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে যোগ দেয় ইসকন বাংলাদেশ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রীপদ চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী এতে বক্তব্য দেন। বক্তব্যে সবাই সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।

কর্মসূচির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানা স্লোগান দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাই।স্লোগানগুলো হলো ‘সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা, দিতে হবে দিতে হবে’, ‘৪৬-এর চেতনায়, বাংলাদেশ চলবে না'’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, জঙ্গিবাদের ঠাঁই নাই’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘'আমার ভাইয়ের খুনি কে, ফাঁসি দাও দিতে হবে’, ‘জঙ্গিবাদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ প্রভৃতি৷