৬ মাস পর সন্তানদের গরুর মাংস খাওয়াতে পারলেন আলমগীর
ছয় মাসের বেশি সময় পরে গরুর মাংস খেয়েছে ১৫ ও ১৭ বছরের দুই বোন। দীর্ঘদিন ধরে গরুর মাংস খাওয়ার জন্য ছোট বোনটি বায়না ধরেছিল বাবা মো. আলমগীরের কাছে। কিন্তু দিন যায়, মাস যায়। ইচ্ছা সত্ত্বেও গরুর মাংস আর কেনার সামর্থ্য হয়নি মো. আলমগীরের।
প্রথম আলোয় গত শনিবার এ নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় ‘সন্তানদের গরুর মাংস খাওয়াইতে মন চায়, কিন্তু সামর্থ্য হয় না’ শিরোনামে। মূলত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রিং রোড ধরে শনিবার রিকশা চালাচ্ছিলেন মো. আলমগীর। রাস্তার পাশেই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে জটলা দেখে থামেন তিনি। দেখেন, গাড়ির গায়ে লেখা—গরুর মাংস ৫৫০ টাকা কেজি।
বিক্রেতাকে তিনি বলেছিলেন, টাকা নেই সঙ্গে। পরের দিন যদি বিক্রেতা আসেন, তাহলে তিনি কিনতে আসবেন।
তখন মো. আলমগীর প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘কয়েক মাস ধরে মেয়েটা বলছে, গরুর মাংস খাবে। ও ক্লাস এইটে পড়ে। রিকশা চালিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিনলে সারা দিনের কামাই শেষ। প্রতিদিন কামাই দিয়ে তেল, চাল কিনতে হয়।’
এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর দুজন আলমগীরকে আর্থিক সহায়তা করেন। সেই টাকা দিয়ে গতকাল সোমবার রাতে গরুর মাংস, পোলাওয়ের চাল কিনে আনেন মো. আলমগীর। আজ সন্ধ্যায় তিনি প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘নিজের সন্তানগুলোর কাছে মুখটা রক্ষা পেল। এক কেজি গোশত, পোলাওয়ের চাল এক কেজি, মসলাও কিনেছি। গতকাল (সোমবার) রাতেই রান্না করেছি। বাচ্চারা খুব খুশি হয়েছে। যেকোনো অসিলায় হোক খেতে পারলাম।’
মূলত ছোট মেয়েটি তিন মাস ধরে গরুর মাংস খাওয়ার বায়না করছিল। অনেক অপেক্ষার পর পছন্দের বিরিয়ানি খাওয়া তার জন্য অনেক বড় কিছু বলে জানাল সে।
মেয়েটি প্রথম আলোকে বলে, ‘সম্ভবত ছয় মাস পর গরুর মাংস খেলাম। গরুর মাংস আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবার। আব্বুকে মাঝেমধ্যে বলতাম। দেখতাম, আব্বুর (অর্থনৈতিক) পরিস্থিতি খারাপ, তাই বেশি কিছু বলতাম না। আব্বুও মন খারাপ করত। কিন্তু বুঝতে দিত না। আমি অনেক বলার পর আব্বু শুধু বলত, আজকে না, কালকে। পরে আর বলতাম না।’
আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত মো. আলমগীরকে দুজন সহায়তা করেছেন। মিরপুর ১-এর একজন বাসিন্দা গরুর মাংস ও প্রয়োজনীয় মসলা কেনার জন্য এক হাজার টাকা দিয়েছেন। অন্যজন যুক্তরাজ্য থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন সন্তানদের ঈদ উপলক্ষে জামাকাপড় কিনে দিতে।
মো. আলমগীর দুই সন্তান, স্ত্রী ও নিজের মাকে নিয়ে থাকেন মোহাম্মদপুরের লিমিটেড এলাকায়। তিনি জানান, কয়েক বছর আগে স্ট্রোক করার পর থেকেই শরীর অসুস্থ থাকে। একটি ভাতের হোটেল চালাতেন। কিন্তু বাকি দেওয়ায় লোকসানে পড়েন। চার লাখ টাকার বেশি ঋণ হয়ে যায়। এরপর কিছুদিন চটপটির দোকান চালিয়ে সুবিধা করতে পারেননি। বছর দেড়েক ধরে রিকশা চালান।
মো. আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে সবাই একটু অবহেলার চোখে দেখে। বর্তমানে অবহেলার পাত্র হয়ে আছি। তবে হালাল পথে আছি। দুর্নীতি না করে, অন্যের টাকা না মেরে খাচ্ছি না। হালাল রুজি করি, এটাই বড় কথা।’
রিকশা চালিয়ে দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করেন মো. আলমগীর। তাঁর স্ত্রী মিরপুরের একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন, যার পুরোটাই ঘরভাড়ার পেছনে চলে যায়। মো. আলমগীর বলেন, রিকশা চালিয়ে মাসে ১৫ হাজার টাকার মতো আয় হয়। মেয়ের পেছনে প্রতিদিন খরচ হয় ৪০ টাকা। স্ত্রীকে প্রতিদিন যাতায়াতের জন্য দেন ৮০ টাকা। বাকিটা দিয়ে খাবারসহ অন্যান্য খুব টেনেটুনে চালাতে হয়।