৯ দফা দাবি ঘোষণা করে ফার্মগেট ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা

দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি গাড়ি ফার্মগেট মোড়ে এলে শিক্ষার্থীরা গাড়িচালকের লাইসেন্স দেখতে চান। চালক তা দেখাতে পারেননি
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর ফার্মগেটে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছে ৯ দফা দাবি ঘোষণা করে আজ বৃহস্পতিবারের মতো আন্দোলন স্থগিত করেছেন। আগামীকাল শুক্রবারের মধ্যে দাবি মানা না হলে শনিবার বেলা ১১টা থেকে আবারও আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেন তাঁরা।

গাড়িচাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর ঘটনার বিচার, বাসভাড়ায় হাফ পাস ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফার্মগেটে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন অন্তত ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পরে ৯ দাবি ঘোষণা করে বিকেল ৪টার দিকে বাসায় ফেরেন তাঁরা।

সরেজমিন দেখা যায়, ফার্মগেট মোড়ে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, তেজগাঁও কমার্স কলেজ, আইডিয়াল কমার্স কলেজ, বিএএফ শাহীন কলেজ, সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, হলিক্রস কলেজ, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল কলেজ, মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ন্যাশনাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ফার্মগেটে সড়ক অবরোধ করে দিনভর বিক্ষোভ করেন। অবরোধ চলার মধ্যে সাড়ে চার ঘণ্টা যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে দেননি তাঁরা। তবে লাইসেন্স ও ফিটনেস সনদ থাকার শর্তে ব্যক্তিগত গাড়ি চলতে দিয়েছেন। অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি পরিবহন চলেছে।

তল্লাশির সময় শিক্ষার্থীরা সরকারি কর্মকর্তাদের বেশ কিছু গাড়ির লাইসেন্সও দেখতে পাননি। সেগুলো আটকে রাখেন তাঁরা। পুলিশের বেশ কিছু গাড়িচালকের লাইসেন্সও পাওয়া যায়নি। লাইসেন্স না থাকার পরও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করায় ইমরান নামের একজন পুলিশ সদস্য দুঃখ প্রকাশ করেন। আর লাইসেন্স না থাকায় ওমর ফারুক নামের আরেক পুলিশ সদস্যকে শিক্ষার্থীরা তেজগাঁও জোন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রুবাইয়াত জামানের কাছে তুলে দেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগানসংবলিত ব্যানার হাতে অবস্থান নেন। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘আমরা বাঁচতে চাই/ নাঈম হত্যার বিচার চাই’, ‘আমার ভাই কবরে/ খুনি কেন বাহিরে?’, ‘রক্ত কেন ঝরছে/ সরকার কি মরছে?’, ‘পড়ালেখা করে যে, গাড়িচাপায় মরে সে’, ‘জাস্টিস ফর নাঈম’, নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘আর কতজন মরলে টনক নড়বে’, ‘অ্যাম আই নেক্সট’, ‘সংগ্রাম আমি দেখিনি, তবু রক্ত কেন হাতে?’, ‘কে রে কোথায় আছিস/ তোরা যেখানে আছিস রুখে দাঁড়া’ ইত্যাদি।

শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগানও দেন। যেমন ‘বিচার চাই, বিচার চাই, নাঈম হত্যার বিচার চাই’, ছাত্রসমাজের অ্যাকশন/ ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, জেগেছে রে জেগেছে/ ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘পুলিশের গাড়ির লাইসেন্স নাই/ বাংলাদেশ পুলিশ হায় হায়’, ‘লেগেছে রে লেগেছে/ আগুন লেগেছে’, ‘আমার ভাইয়ের খুনি কে/ রাষ্ট্র রাষ্ট্র’।

এদিকে বিকেল চারটার দিকে আজকের মতো আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা যেসব দাবি তুলে ধরেন, সেগুলো হলো নাঈমসহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সব শিক্ষার্থীর ঘটনায় মামলার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করা, নাঈমসহ দুর্ঘটনায় নিহত সব শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, দুর্ঘটনায় আহত সব যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা, ঢাকাসহ সারা দেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথে ভাড়ায় শিক্ষার্থীদের হাফ পাস প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নিশ্চিত করা, বৈধ-অবৈধ যানবাহনের চালকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈধতার আওতায় আনা ও বিআরটিএর সব কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা, সারা দেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয় ও আধুনিক এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ নিশ্চিত করা, গণপরিবহনে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি ও সহিংসতা বন্ধ করা, জনসাধারণের জন্য ফুটপাত, ফুটওভারব্রিজসহ নিরাপদ চলাচল ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, পরিকল্পিত বাস স্টপেজ ও পার্কিং নির্মাণ এবং এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা।