৯ বছর ধরে বন্ধ ভবনের কাজ

কাজ বাকি ৩০ শতাংশ। আগে খরচ করা টাকা ফেরত চাইছে উত্তর সিটি। দিতে রাজি নয় দক্ষিণ।

নির্মাণাধীন অবস্থায় ৯ বছর ধরে পড়ে আছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের বহুতল ভবন। সম্প্রতি তোলা
ছবি: হাসান রাজা

রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে কাঁচাবাজার যাত্রাবাড়ী, মহাখালী ও আমিনবাজারে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৫ বছর আগে। অন্য দুটি কাঁচাবাজারের নির্মাণকাজ প্রায় চার বছর আগে শেষ হলেও হয়নি যাত্রাবাড়ীর কাঁচাবাজারের কাজ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিরোধে বাজারটির নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের কাজ বন্ধ রয়েছে ৯ বছর। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্রুত কাজ শেষ করা না হলে ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে তৎকালীন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন ‘ঢাকা শহরে তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ওই তিন জায়গায় কাঁচাবাজারের জন্য ভবন নির্মাণ শুরু করে। ২০১০ সালে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৭ সালে মহাখালী ও আমিনবাজারের কাঁচাবাজারের ভবন নির্মাণ শেষ হয়। তবে সেখানেও কাঁচাবাজার স্থানান্তর এখনো শুরু হয়নি। আর যাত্রাবাড়ীর কাঁচাবাজার ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে ২০১২ সাল থেকে। বেসমেন্টসহ পাঁচতলা এই ভবনের নির্মাণকাজ এখনো ৩০ শতাংশ বাকি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

দুই সিটির প্রকৌশলীরা বলছেন, তিনটি কাঁচাবাজারের নির্মাণকাজ শুরুর পর ২০১১ সাল পর্যন্ত ঠিকভাবেই চলছিল। ২০১২ সালে সিটি করপোরেশন ভাগ হওয়ার পর যাত্রাবাড়ীর নির্মাণাধীন কাঁচাবাজারটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মধ্যে পড়ে। অন্য দুটি পড়ে উত্তরে। তবে পুরো প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পড়ে উত্তর সিটির ওপর। কিন্তু সিটি করপোরেশন ভাগ হওয়ার পর যাত্রাবাড়ীর কাজটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় চার বছর পর উত্তরের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক কাজের উদ্যোগ নেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর দক্ষিণ সিটি এলাকায় উত্তর সিটির টাকা খরচে ভবন নির্মাণে আপত্তি তোলেন বর্তমান মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। পরে ভবনটির কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

ওই প্রকল্পের নথি ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের শুরুর দিকে যাত্রাবাড়ীর পাইকারি কাঁচাবাজারটি চালুর উদ্যোগ নেন দক্ষিণ সিটির তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক। তখন তিনি উত্তর সিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সমন্বয় সভাও করেন। ওই সভায় শাহ মো. এমদাদুল হক বলেন, অসমাপ্ত অবস্থায় ফেলে রাখার কারণে নির্মিত ভবনটির অনেক কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই কাজ যত বিলম্ব হবে, ক্ষতির পরিমাণ ততই বৃদ্ধি পাবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে। ব্যবসায়ীদের কয়েকজন নিজেদের মতো করে ভবনের কিছু অংশ ব্যবহার করছেন। পার্কিং করা জায়গায় ভ্যানগাড়ির গ্যারেজ তৈরি করে রাখা হয়েছে। ভবনের ভেতর দোকানের শাটারগুলোর মধ্যে কয়েকটি খুলে গেছে। জানালার গ্লাস ভেঙে পড়েছে।

দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ বলছে, সমন্বয় সভার আগে ভবনের অবস্থা জানতে দুই সিটির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ওই পরিদর্শনের একটি প্রতিবেদন দক্ষিণ সিটির অঞ্চল-৫-এর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীল উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভবনটির ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ শেষ করে ভবনটি চালু করতে হলে সিভিল ও স্যানিটারি খরচ বাবদ আরও ৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া সাব-স্টেশন, গভীর নলকূপ ও বৈদ্যুতিক কাজে আরও ১৮ কোটি টাকার কাজ করতে হবে। এই টাকা খরচ করতে দক্ষিণ সিটি সম্মতিও দেয়।

তবে ঝামেলা বাধে ভবন নির্মাণে উত্তর সিটির নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হওয়া অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে। যাত্রাবাড়ী পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণে এখন পর্যন্ত খরচ হওয়া ৭৪ কোটি টাকার মধ্যে উত্তর সিটি নিজস্ব তহবিল থেকে ৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা খরচ করেছে। ভবনটি দক্ষিণ সিটির কাছে হস্তান্তরে আপত্তি না থাকলেও নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করা অর্থ ফেরত চাচ্ছে উত্তর সিটি। কিন্তু দক্ষিণ সিটি বলছে, আগের দায়দেনা তারা পরিশোধ করবে না। ভবনটি চালু করতে নতুন করে যত টাকা লাগবে, তা তারা খরচ করবে। জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান যে অবস্থায় ভবনটি আছে, সে অবস্থায় এটি বুঝে নিতে তাঁরা রাজি আছেন। তবে উত্তর সিটিকে কোনো টাকা তাঁরা দেবেন না।

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব নুমেরী জামান যাত্রাবাড়ীর কাঁচাবাজার ভবনটি উত্তর সিটির কাছ থেকে দক্ষিণ সিটির কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি দেখভাল করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভবন নির্মাণে দায়দেনাসহ সার্বিক বিষয়ে দুই সিটির মতামত চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশন তাদের প্রস্তাবনা স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে জমা দিয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের ভবন নির্মাণে উত্তর সিটি নিজস্ব তহবিল থেকে যে টাকা খরচ করেছে, সেই টাকা দেওয়ার জন্য দক্ষিণ সিটিকে অনুরোধ করা হয়েছে। যদি দেওয়া না হয়, তাহলে কীই-বা করার আছে। তবে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা ভবনটি যাতে চালু হয়, মানুষ যাতে এর সুফল পায়, সেটা চান তিনি।