কান্না থামাতে না পেরে দুই মেয়েকে ঘরে আটকে রেখেছিলেন মা

ছবি: প্রতীকী

স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর অন্তঃসত্ত্বা শামীমা (ছদ্মনাম-৩৫) ঢাকার উত্তরায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন। যমজ দুই মেয়েশিশু জন্মের পর বাবার দেওয়া ঢাকার উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেন শামীমা। তিন বছর আগে শামীমার বাবা মারা যান। এরপর ভাইয়েরা আর শামীমার খোঁজ রাখেননি। খাবারের অভাবে দুই সন্তানকে নিয়ে ফ্ল্যাটে তিন দিন ধরে অচেতন অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি।
অথচ এই শহরেই থাকেন শামীমার মা ও দুই ভাই। তাঁদের একজন আবার বিসিএস কর্মকর্তা।

পুলিশ ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাবার রেখে যাওয়া সামান্য টাকায় দুই সন্তানকে নিয়ে কোনোমতে চলছিল তাঁর সংসার। সেই টাকাও এক সময় শেষ হয়ে যায়। অর্থের অভাবে লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যায় ১০ বছর বয়সী দুই সন্তানের। বিল পরিশোধ না করায় ফ্ল্যাটের বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ তিন মাস আগে কেটে দেওয়া হয়। খাবার কেনার টাকা নেই, ক্ষুধার কষ্টে দুই মেয়ে কান্না শুরু করে। অসহায় শামীমা সহ্য করতে না পেরে সন্তানদের একটি কক্ষে আটকে রাখেন। গত শনিবার গভীর রাতে ওই ফ্ল্যাট থেকে কান্নার তীব্র আওয়াজ শুনতে পান রাস্তায় টহলে থাকা উত্তরা–পূর্ব থানার পুলিশ। পরে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় মা ও মেয়েকে উদ্ধার করে উত্তরার একটি হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

উত্তরা–পূর্ব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুজাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অচেতন অবস্থায় একটি কক্ষে পড়েছিলেন মা। পাশের কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল দুই সন্তানকে। বাসার আসবাব বলতে রয়েছে শুধু খাট। রান্নাঘরে গিয়ে মনে হয়েছে এক মাস বাসায় কোনো রান্না হয়নি।

মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে তাঁর দুই সন্তান কান্না করছিল। হাসপাতালে চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন তাঁরা অনেক ভালো আছেন। শামীমার ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাঁরা এড়িয়ে যাচ্ছেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শামীমার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে। তাঁর বাবা পেশায় ছিলেন আইনজীবী। শামীমার চার ভাই রয়েছে। এই ঢাকা শহরেই থাকেন তাঁর দুই ভাই। তাঁদের মা থাকেন ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বনানীর বাসায়। তিনি একজন বিসিএস (রাজস্ব) কর্মকর্তা। আরেক ভাই থাকেন শ্যামলীতে। এক ভাই কানাডায় থাকেন। আর বড় ভাই চাকরির সুবাদে থাকেন খুলনায়।

মুঠোফোনে শামীমার বড় ভাই প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুনেছি, পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করেছে। আমার সঙ্গে অনেক দিন যোগাযোগ নেই। আমার ছোট ভাই বিসিএস কর্মকর্তা। তিনি খোঁজখবর রাখতেন।’ তিনি কেন খোঁজখবর রাখেননি, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় আমাদের মধ্যে যোগাযোগ কম ছিল।’

পরে তাঁর কাছ থেকে মুঠোফোন নম্বর নিয়ে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।