চলছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের ঢাকা আঞ্চলিক পর্ব

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ক্যাম্পাসে আজ শনিবার সকাল আটটা থেকে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হতে শুরু করে
ছবি: খালেদ সরকার

রাজধানীর ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের ঢাকা আঞ্চলিক পর্ব। শুধু অনলাইন বাছাইপর্বে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা এই আঞ্চলিক পর্বে অংশ নিচ্ছে।

ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ক্যাম্পাসে আজ সকাল আটটা থেকে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হতে শুরু করে। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন। ঢাকা আঞ্চলিক উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।

বিশেষ অতিথি ছিলেন, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন মাহাদী হাসান, ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমেদ জাহাঙ্গীর মাসুদ, বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দলের কোচ ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান, ফিজিক্যাল সায়েন্সেস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ঢাকা আঞ্চলিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের আহ্বায়ক অধ্যাপক আহমাদ মোস্তফা কামাল। এ পর্বের উপস্থাপনা করেছেন ফিজিক্যাল সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদ আলম।

ঢাকা আঞ্চলিক উৎসবের উদ্বোধনী পর্বের অতিথিরা
ছবি: খালেদ সরকার

উদ্বোধনী পর্বে আহমদ মোস্তফা কামাল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘পদার্থবিজ্ঞান প্রকৃতির নিয়মকে ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা ধরনের সমস্যার সমাধান দেয় পদার্থবিজ্ঞান। আমাদের বলে, প্রকৃতি কীভাবে কাজ করে। আমরা চেষ্টা করি, তোমরা যেন এর আনন্দটুকু বুঝতে পারো। বড় হয়ে তোমরা যা-ই হও, তোমরা এর আনন্দটুকু অনুভব করতে পারবে, আমি সেই প্রত্যাশা করি। তোমাদের সবাইকে শুভেচ্ছা, ভালোবাসা ও শুভকামনা রইল।’

বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর মাসুদ বলেন, ‘এত দিন পর তোমরা বড় একটা ক্যাম্পাসে একত্র হয়েছ, বিষয়টা আনন্দের, ভালো লাগার। তোমরা অলিম্পিয়াডে অংশ নেবে। অলিম্পিয়াডের সমস্যা সমাধান করলে মস্তিষ্ক আরও পারদর্শী হয়ে ওঠে।’

বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দলের কোচ ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন বলেন, ‘তোমরা শুনেছ, ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন কঠিন হবে। কিন্তু বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলোও তো সহজ নয়, কঠিন। এই যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে, এই সমস্যাগুলোও কিন্তু সমাধানের ভার তোমাদের কাঁধে। তোমরা দেশকে ভালোবাসবে। দেশের মানুষের কাজে লাগবে, উপকার হবে—এ রকম সমস্যাগুলোর সমাধান করবে। আমরা এখানে তোমাদের সেই পথটুকুই শুধু দেখিয়ে দিতে চাই।’

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন মাহাদী হাসান বলেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। ইদানিং এটা নিয়ে বেশ আলোচনাও হচ্ছে। কিন্তু এআই আমাদের সবকিছু করে দিবে না। এআইয়ের পেছনের কাজটা কিন্তু মানুষই করছে। এগুলোও পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই চলে।তাই আমাদের সবার পদার্থবিজ্ঞান শিখতে হবে। জানতে হবে কম্পিউটার বিজ্ঞান সম্পর্কে। সর্বোপরি দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশের জন্য কাজ করতে হবে।

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সহ-উপাচার্য ও ঢাকা আঞ্চলিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের আহ্বায়ক অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, পদার্থবিজ্ঞানের বলয় থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা জীবনের একটা অংশ। মহাবিশ্বের সবকিছুই তো পদার্থ দিয়ে তৈরি। তাই আমাদের পদার্থবিজ্ঞান নিয়েই চলতে হবে। যতটুকু সম্ভব এটাকে বোঝার চেষ্টা করাই উচিত। আর একটা বিষয় হলো, আমাদের চিন্তা করতে শিখতে হবে। একটা জিনিস এভাবে কেন হলো? অন্যভাবে কেন হলো না—এই ধরনের প্রশ্ন মাথায় আসতে হবে। আর মাথার মধ্যে প্রশ্ন তৈরি করার সেই কাজটাই করে পদার্থবিজ্ঞান।

এ বছর (২০২৩ সালে) জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হবে ৫৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। এ লক্ষ্যে প্রতিবারের মতো এবারও দেশব্যাপী ১৩তম ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৩ আয়োজন করা হচ্ছে। গত ২০ ও ২১ জানুয়ারি ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীরা অনলাইনে বাছাইপর্বে অংশগ্রহণ করে।

বাছাইপর্বে সারা দেশ থেকে অংশ নেওয়া প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে ৪ হাজার ৬৩৮ শিক্ষার্থীকে নির্বাচিত করা হয়। তাদের নিয়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে আঞ্চলিক পর্ব। আজ চলছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের ঢাকা আঞ্চলিক পর্ব।

আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আঞ্চলিক পর্বের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা দেড়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রশ্নোত্তরপর্ব চলবে বেলা ৩টা থেকে ৩টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। বিকেল চারটায় পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে শেষ হবে এ আয়োজন।

১৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হচ্ছে চারটি ক্যাটাগরিতে। ৫ম-৬ষ্ঠ শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা এ ক্যাটাগরি, ৭ম-৮ম শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা বি ক্যাটাগরি, ৯ম-১০ম শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা সি ক্যাটাগরি এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা ডি ক্যাটাগরি। বাছাইপর্ব শেষে ঢাকা অঞ্চল থেকে চার ক্যাটাগরিতে ১ হাজার ১৮৬ জনকে বাছাই করা হয়েছে। এর মধ্যে এ ক্যাটাগরিতে রয়েছে ১২৪ জন, বি ক্যাটাগরিতে ১৭৯, সি ক্যাটাগরিতে ৩৯৯ এবং ডি ক্যাটাগরিতে ৪৮৪ জনকে বাছাই করা হয়।

ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের বিভিন্ন আঞ্চলিক পর্ব আয়োজিত হবে অফলাইনে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভেন্যুতে। এরপর আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে আয়োজিত হবে জাতীয় উৎসব। পরে জাতীয় উৎসবের বিজয়ীদের নিয়ে ক্যাম্প আয়োজন করা হবে। ক্যাম্প শেষে বাছাই করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত হবে বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দল। ওই দলটিই জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠেয় ৫৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।

দেশে শিক্ষার্থীদের পদার্থবিজ্ঞানে দক্ষ করে তুলতে ২০১১ সাল থেকে আয়োজিত হচ্ছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। এ অলিম্পিয়াডের আয়োজন করছে বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কমিটি। আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। ব্যবস্থাপনায় রয়েছে প্রথম আলো। এ ছাড়া ম্যাগাজিন পার্টনার হিসেবে থাকছে কিশোর আলো ও বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা। টেকনিক্যাল পার্টনার হিসেবে আছে বিডিকম। ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ও আঞ্চলিক পর্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে bdpho.org ওয়েবসাইটে।

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা